১২ বছর আগে এক দুর্ঘটনায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন কাশ্মীরের বুধগামের ইনশাহ বাসির (Inshah Bashir)। তারপর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি আর ফিরে পাননি কোনোদিন। হুইলচেয়ারই হয়ে উঠেছে সারা জীবনের সঙ্গী। কিন্তু তারপরেও স্বপ্ন দেখতে ছাড়েননি তিনি। সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে গিয়েছেন বাস্কেটবলের (Basketball) কোর্টে। এমনকি বাস্কেটবলে ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে পৌঁছে গিয়েছেন আমেরিকাতেও।
হুইলচেয়ার বাস্কেটবল অবশ্য নতুন খেলা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই প্যারালিম্পিকেও এই খেলার আয়োজন হয়ে আসছে। ভারতও অংশ গ্রহণ করেছে সেখানে। কিন্তু ইনশাহ যখন বাস্কেটবল কোর্টে নামেন, তখন রাজ্যে পুরুষদের হুইলচেয়ার বাস্কেটবল টিম থাকলেও মহিলাদের কোনো টিম ছিল না। তাঁর আগে কাশ্মীরের কোনো মহিলা এই খেলায় এগিয়ে আসেননি। সেই সময় নতুন ভাবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন ইনশাহ।
আরও পড়ুন: IPL Auction 2022: ৫৯০ ক্রিকেটারকে নিয়ে নিলামের তালিকা প্রকাশ, বাংলার ১৪ জন
১৫ বছর বয়সে একটি দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই কোমরের নিচের অংশ পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। নিজের এই প্রতিবন্ধকতা মেনে নিতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল বসিরের। কিন্তু এই সময়েই একদিন পুরুষদের হুইলচেয়ার বাস্কেটবল টিমের খেলা দেখে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনো বাধা পাননি তিনি। কিন্তু রাজ্যে মহিলাদের জন্য কোনো হুইলচেয়ার বাস্কেটবল টিম না থাকায় প্রশিক্ষণ নিতে দিল্লি যেতে হয়েছিল তাঁকে।
I even have witnessed changing attitudes of some of my friends soon after my injury. #Tedxtalks speaker.. pic.twitter.com/TMhYlODHPI
— Inshah Bashir (@InshahBashir) May 24, 2021
দিল্লি শহরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর দেশের বিভিন্ন রাজ্যে খেলায় অংশ নিয়েছেন বসির। বিভিন্ন রাজ্যের দলে যোগদানের সুযোগও পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে আবার ফিরে গিয়েছিলেন কাশ্মীর। কারণ সেখানকার শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মহিলাদের নিয়ে দল তৈরি করতে হবে তাঁকে। এই কাজে পুরুষ হুইলচেয়ার বাস্কেটবল টিমের সদস্যদের কাছ থেকেও যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছেন তিনি। প্রথমে ১২ জন সদস্য নিয়ে দল শুরু হয়। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সদস্য সংখ্যা কমেছে। এখন ৬ জন সদস্যের নেতৃত্ব দেন তিনি।
এর মধ্যেই ২০১৯ সালে আমেরিকায় এক মৈত্রী ম্যাচে ভারতীয় দলের সদস্য হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে বসির মনে করেন, তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মহিলাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শেখানো। সামাজিক মাধ্যমে এই নিয়ে প্রচারও চালান তিনি। প্রয়োজনে কোনো মহিলার পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও কথা বলেন। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, একটি দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি ঘটলেই জীবন থমকে যায় না। যতদিন জীবন থাকে, ততদিনই স্বপ্নের জন্য লড়াই চালানো যায়। নিজের জীবন দিয়ে সেই উদাহরণ তৈরি করে চলেছেন ইনশাহ বাসির।
আরও পড়ুন: Ind Vs WI 2022: ফের ব্যর্থ কোহলি, অধিনায়ক রোহিতের জয়যাত্রা অব্যাহত