মদন মিত্রের (Madan Mitra) বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছে দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি । সূত্রের খবর এমনই। গত কয়েকদিনে মদন মিত্রের একাধিক মন্তব্যের জেরে বিতর্ক ছড়িয়েছে। দল মনে করছে যে, তাঁর এই বিতর্কতি মন্তব্যের জেরে একদিকে যেমন দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, তেমনই দলীয় নির্দিষ্ট রীতিনীতির বিরুদ্ধেও কথা বলা হচ্ছে।
তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান পার্থ চট্টোপাধ্যায় শুক্রবারই মদনের ‘শাস্তির’ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে ওই সূত্রের দাবি। ঘটনাচক্রে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) পার্থ সাংবাদিক বৈঠকে মদনের সাম্প্রতিক নানা মন্তব্য নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘ওঁর (মদন) কোনও মন্তব্যের জবাব আমি দেব না।’’ শাস্তি ঘোষণার আগে মদনকে ‘শো কজ’ করা হতে পারে বলে তৃণমূলের অন্য একটি সূত্রের দাবি। এখনও তিনি দলের তরফে ‘শো-কজ’ বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সংক্রান্ত কোনও চিঠি পাননি দাবি করে শুক্রবার মদন জানিয়েছেন, বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ইতিমধ্যেই তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।
পুরভোটে প্রার্থিতালিকা প্রকাশের পর দলে যে বিক্ষোভের আবহ তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে নাম না করে দমদমের সাংসদ সৌগত রায়কে বিঁধেছিলেন মদন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) তিনি বলেন, ‘‘ওই লুঙ্গি-ধুতি পরে খালি বোটি কাবাব! সহ্য হবে না। পাপ বাপকেও ছাড়ে না। ১৩ বার কেউ নির্বাচনী কেন্দ্র বদলায়! আমরা প্রিয়’দার (প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি) সঙ্গে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রিয়’দার সঙ্গে। হঠাৎ দেখি এক জন লোক চরণ সিংহের সরকারে চলে গিয়েছে।’’ ঘটনাচক্রে, ১৯৭৭ সালের লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুরে কংগ্রেসের টিকিটে জিতলেও পরে জনতা পার্টির ‘বিদ্রোহী’ নেতা চরণের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন সৌগত।
আরও পড়ুন: TMC Agitation: পুরপ্রার্থী নিয়ে দিকে দিকে বিক্ষোভ, প্রশ্নের মুখে সংগঠনের রাশ
তৃণমূলের মধ্যে ‘এজেন্সি ঢুকিয়ে দলকে মিসগাইড করা’ অভিযোগও তোলেন মদন। বলেন, ‘‘‘দু’-তিন জন পঞ্চায়েত মোড়লি করছে, যাতে দলের ফল ভাল না হয়। ইচ্ছা করে ঘেঁটে দেওয়া হচ্ছে।’’ পরের দিন পুরভোটের প্রার্থী নির্বাচন ঘিরে বিক্ষোভ প্রসঙ্গে সরাসরি নাম করে মদন বলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় দলের ছেলেদের চেনেন বলে মনে হয় না।’’ তাঁর এলাকা কামারহাটিতে প্রার্থী নির্বাচন সঠিক হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
পরে অবশ্য কিছুটা সুর নরম করে মদন বলেছিলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সী যে প্রার্থী তালিকা দিয়েছেন, সেটাই চূড়ান্ত। দলের বাইরে এক পা-ও যাব না। দলের চূড়ান্ত প্রার্থীদের জন্য আমাকে এ বার নামতে হবে।’’ কিন্তু পাশাপাশি, দলের নেতৃত্বকে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘যে মুরুব্বিরা এ সব লোকজনকে প্রার্থী করলেন, সেই জনপ্রিয় নেতারা এখন আসছেন না কেন?”
গতকাল মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়র (Mamata Banerjee) পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Abhishek Banerjee) কি তৃণমূলের মুখ? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে কামারহাটির বিধায়ক বলেন, “আমার তো অভিষেকের মুখটা ভাল লাগে। আমার কেমন ওকে মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চা লাগে। আর কার ভাল লাগে আমি কীভাবে বলব? এই দলে মমতাদির পর অভিষেক ছাড়া আর কারও মুখ আমার ভাল লাগে না। কেউ গোটা, কেউ মোটা, কেউ সোটা।”
এরপর তাঁকে প্রশ্ন করা হয় যে, “আপনি কি পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সৌগত রায়দের ইঙ্গিত করছেন?” উত্তরে মদন মিত্র (Madan Mitra) বলেন, “আমি কারও নাম বলিনি। আমি বলেছি অভিষেককে বেশ দেখতে সুন্দর। ফুটফুটে বাচ্চা। অভিষেককে দেখলে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির (Priya Ranjan Dasmunsi) কথা মনে পড়ে যায়। ওর বক্তৃতা। ওর বক্তৃতার কনটেন্ট।” পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী, অর্জুন সিংকে নিয়েও কিছু বলব না। কারণ এরপর এদেরই দেখা যাবে তৃণমূল ভবনে। তখন আমি বেমতলব কেস খাব।”
আরও পড়ুন: Bengal Weather: আজ ফের দুই বঙ্গেই বৃষ্টি, রাতে বজায় থাকবে শীতের আমেজ