আনিস খানের মৃত্যুর (Anis Khan Murder) প্রতিবাদে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মহাকরণ অভিযান (Alia Students Rally) ঘিরে ধুন্ধুমার। মঙ্গলবার দফায় দফায় পড়ুয়াদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় পুলিসের। বার বার রুট বদল করায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হয় পুলিসকে। মিছিলের জন্য উত্তর ও মধ্য় কলকাতায় ব্যাপক যানযট হয়। থমকে যায় সমস্ত যানবাহন। চরম ভোগান্তিতে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। বাস থেকে নেমে লোকজনকে হেঁটে ফিরতে দেখা যায়। বিকেলে কলেজ স্ট্রিটে আটকে দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদের। পড়ুয়ারা রাস্তায় বসে পড়েন।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা মহাকরণ অভিযানের জন্য পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়ে জমায়েত হন। সেখানে হাতে হাত ধরে মানব বন্ধন করেন পড়ুয়ারা। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরাও সামিল হন আন্দোলনে। মানব বন্ধন চলাকালীন সাত মাথার মোড়ে বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখান আন্দোলনকারীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল শুরু হয়।
পুলিসের অভিযোগ, দফায় দফায় বিক্ষোভকারীরা মিছিলের রুট বদলায়। মল্লিক বাজার হয়ে তাঁদের ধর্মতলা যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু রুট বদলে পড়ুয়ারা মৌলালি হয়ে শিয়ালদহ ফ্লাইওভার ধরে এমজি রোডে ওঠে। শিয়াসদহ ফ্লাইওভারে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান চালায়। পরে এমজি রোড হয়ে মিছিল যায় কলেজ স্ট্রিটে। সেখানেই পড়ুয়াদের আটকে দেয় বিশাল পুলিসবাহিনী।
অন্যদিকে, ছেলের মৃত্যুর তদন্ত করতে আসা ‘সিট’কেই এবার প্রশ্ন করলেন মৃত ছাত্র নেতা আনিসের বাবা। তিনি বললেন, ‘‘দিদিই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী, ওঁকে অমান্য করব না। কিন্তু আপনাদের কেন পাঠাচ্ছেন?’’ এই নিয়ে দ্বিতীয়বার রাজ্যের পুলিশ এবং প্রশাসনের তদন্ত প্রক্রিয়ার উপর অনাস্থা জানালেন তিনি।
সোমবারই আনিস মৃত্যুর তদন্তে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর মঙ্গলবার বিকেলে আমতায় আনিসের বাড়িতে পৌঁছন আনিস মৃত্যু রহস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল ‘সিট’-এর সদস্য মিরাজ খালিদ এবং ধ্রুবজ্যোতি দে। ঘটনাস্থল এবং আশপাশের এলাকা পরীক্ষা করার পর আনিসের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে এলে আনিসের বাবা তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনারা কেন এসেছেন? কতবার একই কথা বলব?’’ কার্যত ‘সিট’কে আলাদা করে বয়ান দিতে অস্বীকারই করেন তিনি।
উল্লেখ্য, সোমবারও আনিস মৃত্যুর তদন্তে রাজ্য সরকার সিট গঠন করার পর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাননি আনিসের বাবা। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়েছিলেন। পরে আনিসের দাদা জানিয়ে দেন, তাঁরা সিট নয় সিবিআই তদন্ত চান। মঙ্গলবার সিটের সদস্যরা তাঁর কাছে আনিসের মৃত্যুর ঘটনার বিশদ জানতে চেয়েছিলেন, তার প্রতিক্রিয়ায় ওই জবাব দেন আনিসের দাদা। বলেন, ‘‘আপনাদের কেন পাঠানো হচ্ছে? আমরা সিবিআই তদন্ত চাই জেনেও দিদি কেন সিবিআই করাচ্ছেন না। পুলিশ বা সিট-এ আমাদের বিশ্বাস নেই। পুলিশের উপর বিশ্বাস চলে গিয়েছে।’’ এর জবাবে সিট-এর সদস্যরা বলতে গিয়েছিলেন, ইতিমধ্যেই তিন জন পুলিশকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। জবাবে আনিসের বাবার প্রশ্ন, ‘‘সাসপেন্ড করে কী হবে? সাসপেন্ড চাই না। আমরা চাই আসামী ধরা পড়ুক।’’