১৯৮৫-র পর ফের ২০২২। ৩৭ বছর পর উত্তরপ্রদেশের ভোটে পর পর দু’বার জয় পেল একই দল। ১৯৮৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নারায়ণ দত্ত তিওয়ারির নেতৃত্বে পর পর দু’বার উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা দখল করেছিল কংগ্রেস। আর এবার যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে অসাধ্য সাধান করে নজির গড়ল পদ্ম বাহিনী। ২০১৭-র পর ফের উত্তরপ্রদেশের মসনদে বিজেপি। মোদী-শাহ ম্যাজিক তো ছিলই। কিন্তু এবার দেশের সবচেয়ে বৃহথ রাজ্যে জয়ের নেপথ্যে গোরক্ষপুর মঠের প্রধান পুরোহিত যোগীরও অবদান কম নয়।
ভোটের আগেই যোগী সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে দল ছেড়েছিলেন একাধিক গেরুয়া মন্ত্রী, বিধায়ক। ছিল কৃষক আন্দলনের ভ্রুকুটিও। যার প্রভাব ভোটে পড়তে পারে বলে অনেকেই মনে করেছিলেন। কিন্তু, সেসব কার্যত খড়কুটো হয়ে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশের ভোটে। ৪০৩টির মধ্যে ২৭৪টিতেই এগিয়ে বিজেপি।
১৯৯০-এ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন গোরক্ষপুরের গোরক্ষনাথের মন্দিরে। প্রায় তিন দশক পর সেখান থেকে সোজা লখনউয়ের ৫ নম্বর কালিদাস মার্গে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন। এই গোটা যাত্রাপথে যোগীর পরিচয়— হিন্দুত্ববাদের প্রবল সমর্থক, কঠোর প্রশাসক, ব্যক্তিগত দুর্নীতির লেশমাত্র নেই। গোবলয়ের রাজনীতিতে এর চেয়ে জোরাল মিশেল পাওয়া মুশকিল!
উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ভোটের আগে অনর্গল আশি-বিশের সমীকরণ, বিরোধিতা গুড়িয়ে দিতে ‘বুলডোজার তত্ত্ব’। সংখ্যাগরিষ্ঠের ‘ফায়ার ব্র্যান্ড’ রাজনীতিক হিসেবে রাজ্যের ভিতরে-বাইরে আদিত্যনাথ ছিলেন নির্বিকল্প।
আরও পড়ুন: UP Election Result 2022: উত্তরপ্রদেশে ‘ডবল সেঞ্চুরি’ BJP-র, বহু পিছিয়ে সপা জোট, ‘লাস্ট’ কংগ্রেস
সমালোচকরা অবশ্য বলেন, যোগীর ভাষণে অর্থপূর্ণ দিশার বড় অভাব। কেবল মেরুকরণের প্রচ্ছন্ন খোঁচায় ভরা। থাকে না চাকরির কথা। না শিল্পায়নের ভাবনা। আর আদিত্যনাথের ভক্তদের দাবি, ‘বাবা’ সেটাই বলেন, জনতা ঠিক যেটা শুনতে চায়। বুলডোজারের গুঁতোয় যে ভাবে তিনি সমাজবিরোধীদের (বিরোধীদের অভিযোগ, বেছে বেছে সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের) সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে চান,‘ সিএএ’ বিরোধীদের বাড়িতে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের ক্ষতিপূরণের বিল পাঠান, সেই অনায়াস কায়দাতেই মন্দিরে প্রবেশের রাস্তা আরও প্রশস্ত করতে নামান বুলডোজার। কিন্তু বাকিদের সঙ্গে পার্থক্যটা হল, জনতা মেনেও নেয়। কষ্টেসৃষ্টে হলেও নেয়। কারণ, তারা বিশ্বাস করে, সমষ্টির জন্য ‘বাবা’ ঠিক করছেন।
করোনাকালে যোগী সরকারের ভূমিকা সর্বত্র সমালোচিত হয়েছিল। তবে তার কোনও রেশ ইভিএমে পড়েনি।যোগীকে ঠাকুরপন্থী বলে দেগে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ভোটের আগে ব্রাহ্মণদের মন জিততে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল গেরুয়া শিবির। আর তাতেই বাজি মাত হয়েছে। হিন্দুদের উচ্চবর্ণের ভোটও গিয়েছে পদ্মের ঝুলিতে। পর পর পাঁচবারের সাংসদ। তাঁর হাত ধরেই নজির গড়ে ফের উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন হল বিজেপির। বিজেপি এখন তাই যোগীময়।
আরও পড়ুন: Bhagwant Mann: কমেডিয়ান থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি, ইতিহাস গড়লেন ভগবন্ত মান