যেকোনো ভাবে, যেকোনো বিষয় নিয়ে চাপে রাখা হোক মুসলিমদের। গ্যাস, পেট্রল, ডিজেল, বাজারদর – সবকিছুর পারদ উপরের দিকে। কিন্তু সেসব থেকে নজর ফেরাতে দেশবাসীর নজর ঘুরিয়ে রাখা হোক ধর্ম কেন্দ্রিক বিষয়ে। আপাতত এটাই গেরুয়া শিবিরের এজেন্ডা। ইতিমধ্যেই কর্নাটকের হিজাব বিতর্কে দেশ উত্তাল। তার পরেই তাতে যোগ হয়েছে কর্নাটকেই হালাল মাংস বিক্রি হওয়া নিয়ে আক্রমণের ঘটনা। সম্প্রতি মসজিদের আজান নিয়েও আপত্তি তুলেছে রাজ ঠাকরের দল ও বিজেপি একযোগে। তারই মধ্যে যোগ হল হলদিরাম বিতর্ক।
ঠিক কী ঘটেছে? হলদিরাম’স একটি নতুন চানাচুর তৈরি করেছে যা নবরাত্রির উপোস চলাকালীন খাওয়া যেতে পারে। এই চানাচুরের নাম ফলহারি (Falahari) মিক্সচার। চিনা বাদাম এবং আলুভাজার সঙ্গে সামান্য মশলা মিশিয়ে এই চানাচুর তৈরি করা হয় বলে জানা গিয়েছে। প্যাকেটে উর্দু ভাষার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি এবং হিন্দিতেও চানাচুরের (Snacks) বিবরণ লেখা রয়েছে। নিরামিষ খাবারের জন্য নির্ধারিত সবুজ রঙের দেওয়া রয়েছে প্যাকেটের গায়ে। কিন্তু তার পরেও একজন অনবরত প্রশ্ন করছেন হলদিরামের দোকানের এক মহিলা কর্মচারীকে।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, একটি সংবাদ চ্যানেলের মাইক হাতে নিয়ে একজন মহিলা প্রশ্ন করছেন, “কেন উর্দুতে (Urdu) লেখা হয়েছে? আপনারা উর্দুতে লিখে কী লুকাতে চাইছেন ক্রেতাদের কাছ থেকে?” দোকানের কর্মচারী উত্তরে জানান, “এটা খেলে কোনও সমস্যা হবে না।” কিন্তু বারংবার একই প্রশ্ন করতে থাকেন ওই মহিলা। শেষে দোকানের কর্মচারী জানান, “আপনি এটা নিতে চাইলে নিয়ে নিন। আর না নেওয়ার হলে প্যাকেট রেখে চলে যান।”
কিন্তু তাতেও প্রশ্ন করা শেষ হয়নি। ব্যঙ্গাত্মক সুরে দোকানের কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করা হয়, “কী আছে এতে? কোনও প্রাণিজ তেল?” শান্তভাবে কর্মচারী জানিয়ে দেন, “আপনার যা খুশি ভাবতে পারেন। আমি এই ধরনের ব্যবহার সহ্য করব না।” তিনি আরও বলেন, এই দোকানে অনেক ক্রেতা আসেন যাঁরা উর্দু, ইংরেজি, হিন্দি সব ভাষা বোঝেন। আপনি পড়তে চাইলে আপনার জানা ভাষাতেই পড়ুন।”
हल्दीराम के आउटलेट में घुसकर सुदर्शन न्यूज़ की गुंडागर्दी.
यकीन मानिए ये सब पुलिस की मौजूदगी में हो रहा है. #Haldirams pic.twitter.com/SLv47XHVi4— Puneet Kumar Singh (@puneetsinghlive) April 5, 2022
এই ভিডিও দেখে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, প্যাকেটের গায়ে ওটা আরবি ভাষায় লেখা, কারণ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে এই খাবার পাঠানো হয়। শুধু তাই নয়, অনেকেই জানিয়েছেন, দেশের সমস্ত রেলস্টেশনে উর্দু লেখা রয়েছে। তাহলে কি রেলমন্ত্রকও প্রশ্নের মুখে পড়বে? এমনকি টাকার নোটের গায়েও লেখা রয়েছে উর্দু ভাষায়, হিন্দুরা কি তাহলে টাকাও বয়কট করবেন? সংবিধান মতে উর্দু ভারতের অন্যতম স্বীকৃত ভাষা।
Boycott Gang lets start boycott indian currency… #Urdu #haldiram #Haldirams pic.twitter.com/cW6pDgmiTp
— Prince Siddique (@PrinceSidd786) April 5, 2022
আরও পড়ুন: দেশ ভয়াবহ সংকটে ভারত! দেশে মজুত মাত্র ৭৪ দিনের জ্বালানি তেল
তবে সুদর্শনা টিভি এর আগেও এই ধরনের কাণ্ড ঘটিয়ে শিরোনামে এসেছে। দু’বছর আগে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই চ্যানেলের কিছু শো সেন্সরও করা হয়। অভিযোগ উঠেছিল, মুসলিম-বিদ্বেষী জিনিস প্রচার করছে তারা এবং সরকার সেটা অনুমোদনও করছে!
সরকারি চাকরিতে মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশ’ বিষয়ক পর্ব দেখানো হচ্ছিল সে সময়ে। আদালতের নির্দেশে বন্ধ করা হয় শো-টি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানান, “একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে টার্গেট বানানো হচ্ছে এই শো-এর মাধ্যমে।” বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা বলেন, “আমি একটি এপিসোড দেখেছি। এটি দেখতে অসুবিধা হয়। অনেক কিছুই আপত্তিজনক ভাবে প্রচার করা হচ্ছে, যা বন্ধ করা উচিত।”
সেই ডানপন্থী চ্যানেলটি ফের আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এল নতুন করে হলদিরাম-বিতর্কে। এবার তাদের আপত্তি উর্দু ভাষা নিয়ে। এই বিতর্কেক জেরে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং হয়ে দাঁড়িয়েছে হলদিরাম। বড় অংশের নেটিজেনরাই আপত্তি জানিয়েছেন, ভাষা নিয়ে এই আক্রমণকে, সমর্থন করেছেন হলদিরামের অবস্থানকেই।
Well done to the young girl at #Haldirams – she handled the dumb hate monger (reporter) really well. https://t.co/CI5E6gtWjp
— Shantanu singh (@shantanu940516) April 6, 2022
Dude now I get to know why illiteracy is quite high in India.
Hats off to the sales lady for handling it well. https://t.co/QaZWohv5QE— Ranger (@200_loneranger) April 6, 2022
Kisi bhi joker ko camera ke saamne mic pakda dete hain aajkal. Zero logic in her questions. This is more a clown act than journalism. Should have been thrown out of the shop for creating nuisance. https://t.co/DocVIVtK3Q
— Kshitij Sharma. (@_ghostcookies) April 6, 2022
আরও পড়ুন: BJP: কর্পোরেট সংস্থার অনুদানে এক নম্বরে বিজেপি, ইলেক্টোরাল ট্রাস্টে ‘ব্রোঞ্জ’ পেল তৃণমূল