নাগরিকত্ব পাওয়ার আশাতেই পাকিস্তান থেকে ভারতে এসেছিলেন ওঁরা। কিন্তু দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পরেও জোটেনি নাগরিকত্ব। তাই শেষ পর্যন্ত গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে পাকিস্তানেই ফিরে গিয়েছেন অন্তত ৮০০ হিন্দু শরণার্থী। এমনটাই দাবি করেছে পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সীমান্ত লোক সংগঠন (এসএলএস)। এমন খবরে যথেষ্টই অস্বস্তিতে পড়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের।
‘শ্রীমন্ত লোক সংগঠন’ (Seemant Lok Sangathan) বা SLS- আসলে একটি অলাভজনক সংস্থা। যারা মূলত পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে আইনি লড়াই লড়ে। এই সংগঠনের সদস্যরা পেশাদার আইনজীবী। তাঁদের দাবি, CAA ভারতে কার্যকর হওয়ায় আশার আলো দেখেছিলেন পাকিস্তানি সংখ্যালঘুরা। তাঁদের মধ্যে হিন্দুরা অন্যতম। শরণার্থী হিসেবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকার পর তাঁরা এদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু, আপাতত সেই প্রক্রিয়া বিশ বাঁও জলে। তাই, উপায়ন্তর না পেয়েই ফের পাকিস্তানে ফিরে যান তাঁরা!
এসএলএসের সভাপতি সিং সোধা এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, পাকিস্তান থেকে রাজস্থানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করেছিলেন ৮০০ হিন্দু শরণার্থী। কিন্তু নাগরিকত্ব না পেয়ে গত বছর ফের নিজ ভূমে ফিরে গিয়েছেন তাঁরা। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দেশ থেকে আসা ১০ হাজার ৬৩৫ জন হিন্দু শরণার্থীর নাগরিকত্বের আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭ হাজার ৩০৬ জনই পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থী। এসএলএস সভাপতির দাবি, শুধুমাত্র রাজস্থানেই নাগরিকত্বের অপেক্ষায় রয়েছেন ২৫ হাজার পাকিস্তানি হিন্দু। তাঁদের অনেকেই দুই দশকের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছেন।
আরও পড়ুন: Cooking gas: দাম আরও ৫০ টাকা বাড়ল, হাজারের গণ্ডি পার করল কলকাতায়
ভারত সরকারের নির্দেশ মোতাবেক, কোনও পাকিস্তানি সংখ্যালঘু ভারতে এসে নাগরিকত্বের আবেদন করলে তাঁর সঙ্গে পাকিস্তানের পাসপোর্ট থাকাটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেই পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে ভারত সরকার ওই ব্যক্তির আবেদন গ্রাহ্য করবে না। সেক্ষেত্রে আবেদনকারীকে দিল্লির পাক দূতাবাসে গিয়ে তাঁর পাসপোর্ট রেনিউ বা পুনর্বীকরণ করাতে হবে। এর জন্য মাথাপিছু খরচের পরিমাণ ১ লাখ টাকা (পাকিস্তানি মুদ্রায়)! এখন বিষয় হল, যে পাক সংখ্যালঘুদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় দশা, তাঁরা এত টাকা পাবেন কীভাবে! ফলে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়া ছাড়া তাঁদের কাছে আর কোনও উপায় ছিল না।
২০১৮ সালে মোদী সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, খ্রিষ্টান, শিখ, পারসি, জৈন ও বৌদ্ধদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। দেশের সাতটি রাজ্যের ১৬টি জেলার জেলাশাসকদের এ বিষয়ে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চালুর পরে ২০২১ সালের মে মাসে গুজরাত, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, হরিয়ানা ও পঞ্জাবের ১৩ জেলাশাসককে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৫ ও ৬ নম্বর ধারার অধীনে ছয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের আবেদনে নাগরিকত্ব সনদ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে আবেদন জানিয়েও নাগরিকত্ব পাননি। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন দেশ থেকে আসা ৮ হাজার ২৪৪ জন নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: Fertility Rate: সন্তান নেওয়ার হার সবচেয়ে বেশি কমেছে মুসলিমদের মধ্যে, জানাল মোদীর মন্ত্রক