সত্যিই কি আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন অভিনেত্রী ? মুহূর্তের মধ্যেই শেষ করে দিলেন নিজের প্রাণ? ২৫ বছর বয়সী পল্লবী দের (Pallavi Dey) রহস্য মৃত্যুর পর ঘুরপাক খাচ্ছে এমনই সব প্রশ্ন।
মাত্র ২০-২১ দিন আগেই গড়ফায় কে পি রায় লেনের ফ্ল্যাট ভাড়া করে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেছিলেন পল্লবী ও সাগ্নিক। পেশাগত জগতে এবং বন্ধু-বান্ধবদের কাছে এটি লিভ ইন রিলেশনশিপ হলেও গড়ফার ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা কিন্তু জানতেন তাঁরা স্বামী-স্ত্রী। আবাসনের কেয়ারটেকারও জানাচ্ছেন, স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন ওই অভিনেত্রী ও তাঁর প্রেমিক। তবে কি গোপনে বিয়ে সেরে ফেলেছিলেন পল্লবী দে ও সাগ্নিক চক্রবর্তী? এই নিয়ে ক্রমশই দাঁনা বাঁধছে রহস্য।
রহস্য ঘনিভূত হয়েছে পল্লবী দের ২৬ ফেব্রুয়ারির ফেসবুক পোস্টে। যেই ছবিতে অনুমান করা হচ্ছে, পল্লবীকে প্রোপোজ করছেন তাঁর প্রেমিক। হাতে সম্ভবত রয়েছে একটি বাগদানের আংটিও। হাত বাড়িয়ে রয়েছেন অভিনেত্রী। পোস্টের ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘ফাইনালি’। সেখানে শুভেচ্ছাবার্তাও পাঠিয়েছেন সকলে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিনেত্রী পল্লবীর লিভ ইন পার্টনার সাগ্নিক তাঁর পাড়াতেই থাকতেন। হাওড়ার রামরাজাতলায় GIP কলোনি স্টেশন রোডে দু’জনেরই বাড়ি। সম্ভবত ছেলেবেলা থেকেই পল্লবী ও সাগ্নিক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল বলে অনুমান সকলের। সেই থেকেই তাঁদের মধ্যে প্রেম এবং পরবর্তীতে লিভ ইনের সম্পর্ক বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
সূত্রের খবর, দুদিন ধরে কথা কাটাকাটি নাকি হয়েছিল দুজনের মধ্যে। কিন্তু কী নিয়ে তা জানা যায়নি। সেটা সঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। কোনও সুইসাইড নোটও উদ্ধার হয়নি ঘর থেকে। এদিন সিলিং থেকে বিছানার চাদর দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় পল্লবীর দেহ উদ্ধার হয়।
পল্লবী দের বাবার অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। সেই অভিযোগ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি সাগ্নিকের বাবা-মা। সাগ্নিকের বাবা সুভাষ চক্রবর্তী বলেন, ”ওঁরা লিভ ইন করতে বলেই জানিয়েছিল আমাদের। যদিও এই লিভ ইন সম্পর্কে বিষয়ে আমাদের মত ছিল না। আমরা চাইতাম ওঁরা বিয়ে করুক।” সাগ্নিকের মা সন্ধ্যা চক্রবর্তী বলেন, ”মাঝেমধ্যেই পল্লবীর সঙ্গে কথা হত। দু’জনেরই মাথা গরম করার স্বভাব ছিল।”
আরও পড়ুন: Bengali Film: মুক্তি পেল রাজ্ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘হাবজি গাবজি’-র নতুন গান ‘দূরে’
বর্তমানে ‘মন মানে না’ ধারাবাহিকে অভিনয় করছিলেন পল্লবী। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধারাবাহিকের শুটিং করেছেন তিনি। শনিবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে বেশ কয়েকটি স্টোরি পোস্ট করেছিলেন পল্লবী। দেখা গিয়েছিল, রাস্তার ধারে গরম মোমো হাতে ছবি দিয়েছিলেন তিনি। রাস্তায় বিক্রি হওয়া হলুদ-গোলাপি হাওয়াই মিঠাইয়ের দিকেও এগিয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেই মুহূর্তও লেন্সবন্দি করে ভাগ করে নিয়েছিলেন সকলের সঙ্গে।
নেটমাধ্যমে আগাগোড়াই সক্রিয় পল্লবী। মৃত্যুর দু’দিন আগেও বধূ সাজে ছবি দিয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেখানে টুকটুকে লাল বেনারসি, গা ভর্তি গয়নায় সেজে উঠেছিলেন তিনি। তারও এক দিন আগে হালকা নীল রঙের ফুলছাপ জামায় লেন্সবন্দি হয়েছিলেন পল্লবী। তাঁর মুখে হাসি উজ্জ্বল। সেই ছবি দিয়ে পল্লবী লিখেছিলেন, ‘হাসতে থাকুন। জীবন সুন্দর। সেখানে হাসার অনেক কারণ আছে।’
মৃত্যুর দিন কয়েক আগেও যিনি এ ধরনের ইতিবাচক পোস্ট করেছেন, সেই একই মানুষ কি এ ভাবে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারেন? নাকি এই মৃত্যুর পিছনে রয়েছে তাঁর প্রেমিকের প্ররোচনা? এমনই অনেক প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে পল্লবীর মৃত্যুকে ঘিরে।
আরও পড়ুন: ‘আমি সিরাজের বেগম’ খ্যাত পল্লবী দে-র ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার গড়ফা থেকে, ছিলেন লিভ-ইন সম্পর্কে