স্বীকৃতি চুরির অভিযোগ উঠেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে সেই গোটা বিতর্কে জল ঢাললেন তপতী গুহ ঠাকুরতা নিজে। গতকাল এই ‘স্বীকৃতি বিতর্ক’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তপতী বলেন, ‘এটা আমার একার স্বীকৃতি বলা ভুল। অনেকেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই স্বীকৃতি মুখ্যমন্ত্রী চুরি করে নিচ্ছে, এটা বলা আরও ভুল। মুখ্যমন্ত্রীর অবদান অন্য জায়গায়। আজকে হতে পারে, আমি যে কাজটা করেছিলাম, সেটা ওনাদের জানা ছিল না। সেটা এখন নানা কারণে তিনি জানতে পেরেছেন। এখন উনি জানেন যে এই কাজটা অনেকটাই আমরা করেছি।’
বৃহস্পতিবার সকালে ইউনেস্কোর প্রতি ধন্যবাদজ্ঞাপন পদযাত্রার আয়োজন হয় শহরে। তার পর রেডরোডে বিশেষ অনুষ্ঠানও ছিল। তা নিয়ে এ দিন মমতাকে তীব্র কটাক্ষ করেন সুকান্ত। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বরাবর একটি কাজে এক্সপার্ট। তা হল, অন্যের কৃতিত্ব চুরি করা। কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রা বা প্রধান ইউনেস্কোতে কিছু পাঠাতে পারেন না। একজন বাঙালি গবেষিকা এ নিয়ে গবেষণা করে। তৈরি করেন ডসিয়ার, যা নজরে আসে কেন্দ্রীয় সরকারে। তার পর কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক মন্ত্রকের মাধ্যমে ইউনেস্কোর কাছে যায়। তাতেই ইউনেস্কো বাংলার ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোকে স্বীকৃতি দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন সেটাকে ঘটা করে পালন করে ভোটের ব্যবসা করতে এবং কৃতিত্ব চুরি করতে।’’ কৃতিত্ব যদি দিতে হয় কাউকে, তাহলে সেই গবেষিকা এবং যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য বলেই প্রকারান্তরে জানান সুকান্ত।
সিপিএম-এর (CPM) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মুখেও একই কথা শোনা যায়। তিনি বলেন, ‘‘তপতী গুহ ঠাকুরতা ডসিয়ার বানিয়ে ইউনেস্কোর কাছে দুর্গাপুজোকে তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী সার্বজনীন এই উৎসবকে সরকারি উৎসবে পরিণত করছেন। ছুটি দিয়ে, সার্কুলেশন দিয়ে জড়ো করছেন সকলকে। কারণ ইস্যুটাকে পাল্টাতে হবে, যাতে দুর্নীতি থেকে নজর ঘোরানো যায়। রোম সাম্রাজ্যের সময় থেকে এমন হয়ে আসছে।’’
আরও পড়ুন: NCRB Data: কলকাতা দেশের নিরাপদতম শহর, অপরাধের তালিকায় শীর্ষে দিল্লি
কিন্তু এ দিন পদযাত্রা থেকে রেডরোডের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন গবেষিকা তপতী। তাঁর সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করতেও দেখা যায় মমতাকে। অনুষ্ঠানের পর এ দিন এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হন তপতী। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বীকৃতি অন্য কেউ কেড়ে নিয়েছেন, এটা বলা ঠিক নয়। কারণ আমরা যে এই কাজটি করেছি, তা যাঁদের জানার কথা, দুর্গাপুজো কমিটি থেকে শিল্পীরা সকলেই তা জানেন। বাংলার সরকার বিষয়টি জানত না, এটাও ঠিক নয়। কারণ আজ দ্বিবেদী সাহেব যেই পদে রয়েছেন, সেই সময় ওই পদে ছিলেন অর্চিবাবু। তাঁর কাছে গিয়েছিলাম আমরা। ওঁর অনুমোদন পেয়েছিলাম।’’
বিতর্ক নিয়ে তপতীর প্রশ্ন, ‘‘কৃতিত্বের প্রশ্ন উঠবে কেন? যাঁরা প্যান্ডেল বাঁধার কাজ করেন, তাঁরা থেকে রাজ্য সরকার, কলকাতা পুলিশ, সকলেরই অবদান রয়েছে। সরকারের অবদান রয়েছে কারণ সরকার একভাবে বিষয়টিকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। শিল্পীদের কথা বেশি করে বলব। তাঁরাই বাংলার পুজোকে এই নান্দনিক জায়গায় নিয়ে এসেছেন।’’
তাঁকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে লেখালেখি শুরু হয়েছে, তা নিয়েও আপত্তি জানান তপতী । তিনি বলেন, ‘‘দেখলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার সম্পর্কে যা লেখা হয়েছে, তার অনেকটাই ভুল। আমি সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্স-এর ডিরেক্টর নেই। পাঁচ বছর আগে সেই পদ থেকে সরে এসেছি। অবসর নিয়েছি আমি। এখন সাম্মানিক অতিথি শুধু। কখনও প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপিকা ছিলাম না। আমির ছবি দিয়ে বলা হচ্ছে। আমি কিন্তু এ সব বলিনি কখনও। এ সব গল্পের কোনও মানে হয় না।’’
এদিকে গতকাল নিজের ভাষণের শুরুতেই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তপতী গুহ ঠাকুরতাকে ধন্যবাদ জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘আমি তপতীদেবীকে ধন্যবাদ জানাই। যিনি সোশ্যাল স্টাডিজে কাজ করেন এবং অনেক গবেষণা করে সাহায্য করেছেন, তাঁদের আমি ধন্যবাদ জানাই।’ পালটা হাসিমুখে ধন্যবাদ জানাতেও দেখা যায় তপতী গুহ ঠাকুরতাকে।
আরও পড়ুন: TET Recruitment: ২৬৯ জনের চাকরি বাতিলই, চলবে সিবিআই তদন্তই, খারিজ রাজ্যের আবেদন