শিক্ষা দুর্নীতি কান্ডে একের পর এক মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ শাসক দল (TMC)। কিন্তু, শাসক দল তার প্রতি ক্ষুব্ধ হলেও, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আমজনতার কাছে রীতিমত “হিরো”র আসনে বসেছিলেন অভিজিৎ। কিন্তু, এই প্রথম প্রতীক কাড়ার নিদান দেওয়ার জেরে বাম, কংগ্রেসতো বটেই, এমনকি বিজেপিকেও সেভাবে পাশে পেলেন না বিচারপতি।
এসএসসি-র বিতর্কিত নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় শিক্ষা সচিবের জবাবে বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, “অতিরিক্ত পদ তৈরি করে অবৈধ চাকরি রক্ষায় মন্ত্রিসভা, কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয়? রাজ্যের কর দাতাদের অর্থ দিয়ে এ ধরনের অবৈধ নিয়োগকে কীভাবে মান্যতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে মন্ত্রিসভা ?” বিচারপতির মতে, মন্ত্রিসভার এ ধরনের সিদ্ধান্ত শুধু গর্হিত অপরাধই নয়, তার জন্য কমিশনের উচিত শাসক দলের প্রতীক কেড়ে নেওয়া। বিচারপতি বলেন, ” তৃণমূল কংগ্রেসের লোগো প্রত্যাহার করার জন্য, দল হিসাবে তাদের মান্যতা প্রত্যাহার করতে বলব নির্বাচন কমিশনকে। সংবিধান নিয়ে যা ইচ্ছে করা যায় না।”
বিচারপতির এ হেন পর্যবেক্ষণে সরকার যে খুশি নয় তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে এ বার তাঁর উদ্দেশে পরিষ্কার বার্তাও দিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattacharya)। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এদিন চন্দ্রিমা বলেন, “এ ধরনের কথা আগে কখনও বিচারপতিদের মুখে শুনিনি। নির্বাচন কমিশনকে উনি বললেই তৃণমূলের প্রতীক বাতিল হয়ে যাবে এমন নয়। দেশে আইন রয়েছে”। এখানেই না থেমে চন্দ্রিমা বলেন, “আইনের মধ্যে দিয়ে আমরা চলিনি এটা যদি কারও প্রশ্ন হয়, তা হলে জেনে রাখা ভাল যে আইনের মধ্যে দিয়ে দেশের প্রতিটা নাগরিরকেও চলতে হয়। তার মধ্যে বিচারপতিরাও পড়েন।”
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের পরেই নাম না করে তাঁকে বেনজির আক্রমণ করলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ৷ শাসক দলের মুখপাত্রের অভিযোগ, বিচারপতির চেয়ারের অপব্যবহার করা হচ্ছে৷ বিচারপতির চেয়ারে বসে অবসরের পর রাজনীতি করার জমি তৈরি করার অভিযোগও তুলেছেন কুণাল ঘোষ৷
আরও পড়ুন: Pay Slip: ডিসেম্বর থেকেই পে-স্লিপ বাধ্যতামূলক বঙ্গে
বিচারপতি অভিজিৎ-এর মন্তব্য প্রসঙ্গে কোন রাখঢাক না করেই বিমান বলেন, “তদন্ত নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। সেটা বিচারপতি যেমন মনে করবেন, তেমনই করবেন। কিন্তু, বিচারালয় আর বিধানসভার এক্তিয়ার আলাদা। সংবিধান তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এখানে কোনও সংঘাতের জায়গা নেই। কোনও রাজনৈতিক দলকে তার লোগো বা প্রতীক দেয় দেশের নির্বাচন কমিশন। সেটা বিচারপতির বোধগম্য হওয়া উচিত। উনি হয়তো অত্যুৎসাহী হয়ে বলে ফেলেছেন।”
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ”এই সরকারের দুর্নীতি তদন্তে বিচারপতির ভূমিকা প্রশংসনীয়। কিন্তু, মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা খর্ব করা যায় না।” কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরীরও বলেন, ”কোন সরকারের দুর্নীতির জন্য সেই দলের রাজনৈতিক প্রতীক কেড়ে নেওয়ার বিধানকে সমর্থন করা যায় না।” আর, বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ”এটা বিচারপতির ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। একে বিজেপির সমর্থন বা বিরোধিতা করার কিছু নেই।”
আরও পড়ুন: Mithun Chakraborty : মিঠুনের কনভয়ে দুর্ঘটনা, ধাক্কা মারল পরপর ৩ টি গাড়ি