গন্তব্য শুনে ‘নো রিফিউজাল’ লেখা কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে রেকর্ড করে ফেলেছে প্রায়। কিন্তু এসবের পরেও মহানগরীর এই নস্ট্যালজিয়া ভরা ঐতিহ্যকে, আপনি প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না। ভালবাসুন বা ঘৃণা করুন, কলকাতার হলুদ ট্যাক্সিকে ভুলে যাওয়া কঠিন। কিন্তু একটা প্রশ্ন এখন শহরের বাতাসে। হলুদ ট্যাক্সি কী উঠে যাবে?
জানা গিয়েছে, যেসব হলুদ ট্যাক্সির ১৫ বছর হয়ে গিয়েছে সেগুলিকে নতুন করে গড়ে তোলা হবে। সেগুলিকে ইলেকট্রিক যানবাহনে পরিবর্তন করা হবে। তাতে শহরে দূষণ কমবে। আর পরিবেশবান্ধব যানবাহন পাবে মহানগরী। এই বিষয়টি নিয়ে একটি কর্মশালা করা হয়। যৌথ উদ্যোগে তা করে বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স এবং ব্রিটিশ সরকার। এই বিষয়ে বিদ্যুৎ দফতরের সচিব এস সুরেশ কুমার বলেন, ‘এই বিদ্যুৎ ইঞ্জিনের জেরে কলকাতার হলুদ ট্যাক্সির আয়ু বাড়বে। যেখানে ১৫ বছরের ট্যাক্সি বাতিলের নিয়ম চালু হয়েছে সেখানে এমন পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ।’
ইলেকট্রনিক ভেহিকেল দিয়েই পরিবেশবান্ধব বাতাবরণ গড়ে তুলতে চাইছে রাজ্য সরকার। তাই এই বিষয়টিকে আরও বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। এমনকী এটাকেই বাণিজ্যিকভাবে নিয়ে আসতে চায় রাজ্য সরকার। গোটা ভারতের বাজারে এই ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন কার্যকর করতে চায় রাজ্য। বিদ্যুৎ সচিবের কথায়, ‘আমরা চাই ইভি সংস্থাগুলি বাংলার মাটিতে কারবার শুরু করুক। আর বাতাবরণ পরিবেশবান্ধব গড়ে তুলুক।’ ২০২৫ সালে আড়াই হাজার ডি এবং ই–সিরিজের অ্যাম্বাসেডর বাতিলের তালিকায় ঢুকে পড়বে। তাই এই জরুরি উদ্যোগ।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: কড়া নজরে পঞ্চায়েত ভোট, কালীঘাটে শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ডাকলেন নেত্রী মমতা
রাজ্যের পরিবহন দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতার রাস্তায় এখন মোটে সাত হাজারটি ট্যাক্সি চলছে। কোভিড মহামারি শুরু হওয়ার আগে এই সংখ্যাটা ছিল আঠারো হাজারের কাছাকাছি। একটা সময় শহরের নানা প্রান্তে দাপিয়ে বেড়াত হলুদ ট্যাক্সি। তবে এখন সেই দৌরাত্ম্যে ভাটা পড়েছে।
কেন হল এমন পরিস্থিতি? ট্যাক্সি চালকদের সংগঠনের দাবি, ‘প্রতিদিন হলুদ ট্যাক্সি কমে যাওয়ার কারণ, অর্থনৈতিক বিষয়। ২০১৮ সালে শেষ বার হলুদ ট্যাক্সির ভাড়া বেড়েছিল, তার পর পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। করোনা সংক্রমণের ধাক্কার পর সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু সরকার অনুমতি না দেওয়ায় হলুদ ট্যাক্সির ভাড়া বাড়েনি। পাশাপাশি, ১৫ বছর বয়সের যে সব ট্যাক্সি বাতিল হয়েছে, তাদের বিকল্প হিসেবে নতুন গাড়ির পারমিট দেওয়ার কথা পরিবহণ দফতরের। কিন্তু সেই পারমিটও দেওয়া হচ্ছে না।’
ক্রমশ বাজার দখল করে নিচ্ছে এক ফোনে কাছে এসে দাঁড়ানো ওলা, উবর। ট্যাক্সি মালিকেরাই মানছেন, বাজারে ওলা, উবর আসার পরে যাত্রীদের কাছে ট্যাক্সির চাহিদা অনেক কমেছে। যার জেরে কমেছে রোজগার। পাল্লা দিয়ে তাই নতুন ট্যাক্সি বার করার আগ্রহও কমছে। এই শহরের তরুণ প্রজন্ম এখন ট্যাক্সির দিকে ফিরেও তাকাতে পছন্দ করে না। তাঁদের দাবি মুখের উপর বারে বারে না শুনতে কার ভাল লাগে বলুন তো? তা ছাড়া ওলা, উবরের মতো দুয়ারে পরিষেবাটাও তো ট্যাক্সির ক্ষেত্রে মেলে না, আর তার সঙ্গে ভাড়া দর করে প্রত্যাখ্যানের আখ্যান। হলুদ ট্যাক্সির ভবিষ্যৎ কী, তা জানতে অবশ্য সময়ের অপেক্ষা।
আরও পড়ুন: Akhilesh Yadav : CBI-ED’র ‘অতিসক্রিয়তা’র প্রতিবাদ, কলকাতায় নেমেই বিজেপিকে কটাক্ষ অখিলেশের