সদ্য তাঁর ছেলে আসাদ এনকাউন্টারে মারা গিয়েছে। আজ শনিবার ছিল আতিকের ছেলে আসাদের শেষকৃত্যের দিন। আর ছেলের শেষকৃত্যের দিনে মৃত্যু হল উত্তর প্রদেশের গ্যাংস্টার থেকে নেতা হয়ে ওঠা আতিক আহমেদের। শনিবার রাতে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে এই হাড়হিম করা ঘটনা ঘটে।
জানা গিয়েছে, মেডিক্যাল টেস্ট করানোর জন্য প্রয়াগরাজের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কুখ্যাত গ্যাংস্টার আতিক আহমেদ ও তাঁর ভাই আশরফকে। প্রিজন ভ্যান থেকে নামতেই, হাসপাতালের সামনে আতিক ও তাঁর ভাই আশরফকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা। পুলিশি এনকাউন্টারে ছেলে আসাদের মৃত্যু ও তাঁর শেষকৃত্যে যেতে না পারা নিয়েই নানা প্রশ্ন করছিলেন সাংবাদিকরা, হঠাৎ এক ব্যক্তি হাত উঁচিয়ে এসে আতিকের মাথায় বন্দুক ঠেকান এবং ট্রিগারে চাপ দেন। আতিক মাটিতে লুটিয়ে পড়ার সময়ই আরও কয়েকটি এলোপাথাড়ি গুলি চলে। গুলি লেগে মৃত্যু হয় তাঁর ভাই আশরফেরও। পুলিশের সামনেই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে দুই অপরাধীকে খুনের ঘটনায় গোটা উত্তর প্রদেশে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: Air India: মাঝ আকাশে বিমানসেবিকার চুল টেনে মার, মাত্র ১৫ মিনিট উড়েই দিল্লিতে ফিরল বিমান
#WATCH | Uttar Pradesh: Moment when Mafia-turned-politician Atiq Ahmed and his brother Ashraf Ahmed were shot dead while interacting with media.
(Warning: Disturbing Visuals) pic.twitter.com/xCmf0kOfcQ
— ANI (@ANI) April 15, 2023
ইতিমধ্যেই আততায়ী সন্দেহে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে খুনে ব্যবহৃত বন্দুকটিও। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে, আততায়ীরা সাংবাদিকের ছদ্মবেশে এসেছিলেন। আতিক এবং তাঁর ভাইকে খুনের পর তিন দুষ্কৃতী স্লোগান দিতে থাকে। তখন পুলিশ তাঁদের ধরে ফেলে। শান্তি বজায় রাখতে উত্তর প্রদেশের সমস্ত জেলাতেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
কিন্তু বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে আদিত্যনাথের রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে। জানা গিয়েছে, ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ করে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট লখনউ থেকে গিয়েছে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। যদিও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এখনও চুপ শাহের মন্ত্রক। আর এখানেই বিজেপিকে আক্রমণ করতে কসুর করছে না বিরোধীরা। তাঁদের প্রশ্ন, অবিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যে এই ঘটনা ঘটলে কি বিজেপি রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি করত না?
অন্য দিকে, প্রয়াগরাজে এই ঘটনার পর উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল। আতিকের মতো এ রকম ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দিকে হাসপাতালে মেডিক্যাল করাতে নিয়ে যাওয়ার পথে এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন এসপি প্রধান অখিলেশ যাদব। টুইটে তিনি লিখেছেন, “উত্তরপ্রদেশ অপরাধের পরাকাষ্ঠা হয়ে উঠেছে। অপরাধীদের মনোবল আরও মজবুত হচ্ছে। যখন পুলিশের ঘেরাটোপে থাকা এক জনকে এ ভাবে খুন করা যেতে পারে তা হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? মানুষের মধ্যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, কিছু মানুষ সব জেনেবুঝে এমন বাতাবরণ তৈরি করছেন।”
প্রয়াগরাজের হাসপাতালে শুরু হয়ে গিয়েছে আতিক এবং আশরাফের দেহের ময়নাতদন্ত। জানা গিয়েছে, পাঁচ জন চিকিৎসকের একটি প্যানেল ময়নাতদন্ত করবে। পুরো প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফি করা হবে। এ জন্য গোটা হাসপাতাল ঘিরে ফেলেছে নিরাপত্তা বাহিনী। সূত্রের খবর, ঘটনাপ্রবাহ সামলাতে প্রয়াগরাজে পাঠানো হচ্ছে পাঁচ আইপিএসকে। তাঁদের মূল দায়িত্ব হবে, প্রয়াগরাজের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ময়নাতদন্তের পর আতিক এবং আশরাফের মৃতদেহ তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। পরিবার দেহ নিয়ে রওনা দেবে আতিকদের পৈত্রিক ভিটে চাকিয়ার কসারি মসারি গ্রামের দিকে। সেই গ্রামের কবরস্থানেই শনিবার কবর দেওয়া হয় আতিকের ছেলে আসাদকে। সূত্রের খবর, আসাদের কবরের হাত কয়েক দূরেই নতুন করে মাটি খোঁড়ার পর্ব শুরু হয়েছে।