‘তুম আভি চুপ রহো। ইয়ে কুছ অউর চিজ হ্যায়।’ গত লোকসভা নির্বাচনের আগে পুলওয়ামায় সিআরপি-র কনভয়ে হামলার পরে জম্মু-কাশ্মীরের তদানীন্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিককে নাকি এমনই ‘নির্দেশ’ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! দাবি খোদ সত্যপাল মালিকের। বিজেপি নেতা এবং মোদী জমানায় চারটি রাজ্যে রাজ্যপালের দায়িত্ব পালন করা সত্যপাল সদ্য এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, জঙ্গি হামলায় ৪০ জন সিআরপি জওয়ানের মৃত্যুর পরে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ফোনে বলেছিলেন, এই হামলার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘গাফিলতি’ দায়ী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ওয়ার’-এ বিশিষ্ট সাংবাদিক করণ থাপারকে শুক্রবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুলওয়ামা কাণ্ড থেকে শুরু করে ৩৭০ ধারা লোপ, বিজেপির মুসলিম বিদ্বেষ, বিবিসি’র তথ্যচিত্র, রাহুল গান্ধীকে সংসদ থেকে সরানো সহ একাধিক বিষয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন গভর্নর। প্রাক্তন রাজ্যপালের দাবি, পুলওয়ামার হামলার আগে সিআরপিএফ নাকি জওয়ানদের আকাশপথে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেছিল। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তাতে আমল দেয়নি। কেবল তাই নয়, প্রাক্তন রাজ্যপালের অভিযোগ, জওয়ানদের যে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেই রাস্তার নিরাপত্তাও সঠিকভাবে খতিয়ে দেখা হয়নি। তাঁর সাফ অভিযোগ, দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্যই এমনটা হয়েছে।
পুলওয়ামা হামলার খবর পাওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী মোদি করবেট পার্ক (Corbett Park) থেকে তাঁকে ফোন করেছিলেন। সেসময় তিনি বিভিন্ন ত্রুটির কথা তুলেও ধরেছিলেন। প্রধামন্ত্রী তাঁকে মুখ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, কাউকে যেন এই সমস্ত ত্রুটির কথা তিনি যেন না বলেন। শুধু তাই নয়, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও (NSA Ajit Doval) তাঁকে চুপ থাকার উপদেশ দিয়েছিলেন। মালিকের দাবি, তিনি নাকি তখনই উপলব্ধি করেছিলেন, এবিষয়ে যাবতীয় দোষ ও দায় পাকিস্তানের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে কেন্দ্র সরকার ও বিজেপি নির্বাচনী ফায়দা তুলবে। তাঁর বক্তব্য, পুলওয়ামার ঘটনা গোয়েন্দা ব্যর্থতার স্পষ্ট নিদর্শন। ৩০০ কিলোগ্রাম আরডিএক্স বিস্ফোরক (RDX Explosives) নিয়ে পাকিস্তান (Paksitan) থেকে একটি গাড়ি এসে জম্মু-কাশ্মীরের গ্রামে রাস্তায় ১০-১৫ দিন ধরে অবাধে ঘুরে বেড়াল, অথচ কেউ টেরই পেল না।
আরও পড়ুন: NCERT : এবার পাঠ্যবই থেকে বাদ দেশের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী আজাদের নাম! বাদ ৩৭০ ধারা
সত্যপালের আরও অভিযোগ, জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল থাকার সময় বিজেপি-আরএসএস নেতা রাম মাধব (BJP-RSS leader Ram Madhav) তাঁকে হাইড্রো-ইলেক্ট্রিক স্কিম (hydro-electric scheme) এবং রিলায়েন্স ইনসিওরেন্স স্কিম (Reliance insurance scheme) উতরে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। এর জন্য তাঁকে ৩০০ কোটি টাকার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তিনি সরাসরি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, “আমি কোনও ভুল কাজ করব না”।
মালিক দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী দুর্নীতিবাজদের অপছন্দ করেন না। গোয়ার রাজ্যপাল থাকাকালীন দুর্নীতির কথা প্রধানমন্ত্রীকে বললেও, তাতে তিনি কর্ণপাত করেননি। তিনি কাশ্মীরের রাজ্যপাল থাকাকালীন আম্বানির সংস্থার জীবন বিমা সংক্রান্ত ৩০০ কোটির একটি ফাইল পাশ করানোর জন্য তাঁকে চাপ দিয়েছিলেন RSS নেতা রাম মাধব। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে সত্যপাল বলেছেন, ‘‘উনি কাশ্মীর সম্পর্কে ভুল জানেন। নিজে যা জানেন, তা নিয়েই আনন্দে থাকেন।’’
স্বভাবতই এ নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, “ন্যূনতম প্রশাসন এবং অধিকতম নীরবতা, এই হচ্ছে বিজেপি-র নীতি। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল যে অভিযোগ তুলেছেন, তার জবাব দিতে হবে মোদী সরকারকে।” জয়রামের মতে, কথায় কথায় জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দেয় কেন্দ্র। পুলওয়ামা হামলাও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িয়ে। তাই প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারে না কংগ্রেস। কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাথ আবার বলেন, “CRPF-কে বিমান দেওয়া হল না কেন? জইশ-ই-মহম্মদকে ঘিরে সতর্কবার্তা থাকলেও, কেন ধর্তব্যের মধ্যে আনা হল না বিষয়টি? ২ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১১ বার গোয়েন্দারা হামলা নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। তার পরও কেন গুরুত্ব পেল না বিষয়টি?”
শুধুমাত্র কংগ্রেস নয়, উদ্ধব ঠাকরে নেতৃত্বাধীন শিবসেনা, সমাজবাদী পার্টিও কেন্দ্রের কাছে জবাব চাইতে শুরু করেছে। উদ্ধব অনুগামী সঞ্জয় রাউত বলেন, “বিরোধী শিবিরের নেতারা যখন পুলওয়ামা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন, দেশদ্রোহী বলে চুপ করিয়ে দিচ্ছিল বিজেপি। এখন কী বলবে?” পুলওয়ামা হামলার ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে বলে দাবি তুলেছে সমাজবাদী পার্টি। যদিও বরাবরের মতোই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি। দলের আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যর দাবি, বার বার নিজের অবস্থান পাল্টেছেন সত্যপাল। কখনও রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করেছেন। কখনও আবার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন কেন্দ্রের। তাঁর মন্তব্যকে হাতিয়ার করে নাচানাচির কোনও কারণ নেই।
কংগ্রেসের প্রশ্ন, সত্যপাল তো এখনও বিজেপির সদস্য। বিজেপি তাঁকে বহিষ্কার করছে না কেন? প্রধানমন্ত্রীর চাটুকার চিত্র পরিচালক-অভিনেত্রীদের জন্য এক্স, ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ রদের সময় রাজ্যপাল ছিলেন, তিনি দিল্লিতে ভাড়া বাড়িতে থাকেন! তাঁর জন্য মাত্র একজন দেহরক্ষী রাখা হয়েছে! কী উদ্দেশ্য এর, প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: Bhatinda: জোর করে শারীরিক সম্পর্ক! চাঞ্চল্যকর দাবি ৪ সহকর্মীকে খুনে ধৃত জওয়ানের