লোকসভা নির্বাচন ছ’মাসও বাকি নেই। বিজেপিকে চিন্তায় ফেলে দিল উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহল। এমনকী, মতুয়াগড়ও। উত্তর থেকে সাতটি ও জঙ্গলমহল থেকে পাঁচটি, মোট ১২টি আসন গত লোকসভা ভোটে পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। একুশের বিধানসভা ভোটে ধাক্কা খেলেও গড় পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি। কিন্তু পঞ্চায়েতের (Panchayat Election 2023) ফল প্রকাশ হতেই দেখা গেল ভরাডুবি দশা। যা মুহুর্তে পৌঁছে গিয়েছে দিল্লির দরবারেও। প্রমাদ গুনছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাও। সূত্রের খবর, কেন এই বিপর্যয় তা নিয়ে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে দিল্লির তরফে।
পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহলে বিজেপিকে আরও পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। এখনও অবধি যা গণনা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম। জঙ্গলমহলের এই চার জেলাতেই গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি জয়ের নিরিখে অনেক এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল।
ঝাড়গ্রামের ৭৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্য়ে ৬৫টিতে জিতেছে তৃণমূল। কুড়মি সমর্থিত নির্দলরা জিতেছে ২টিতে। ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু। ২০১৮ সালে গোপীবল্লভপুর ১ নম্বর ব্লক পুরোটাই বিজেপির দখলে ছিল। ৭টা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্য়ে ৬টাই ছিল বিজেপির দখলে। এবার গোপীবল্লভপুর ১ নম্বর ব্লকের ৭টা গ্রাম পঞ্চায়েতেই জিতেছে তৃণমূল। গোপীবল্লভপুর ২ নম্বর ব্লকেও ৪টে গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বিনপুর ব্লকে ৯টা এবং আদিবাসী অধ্য়ুষিত জামবনি ব্লকের ৯টা গ্রাম পঞ্চায়েত গেছে তৃণমূলের দখলে। সেখানে ২-১টা আসনে জিতলেও, বিজেপি এবার কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত পায়নি।
অন্যদিকে, মতুয়া গড় বলে পরিচিত বনগাঁ ব্লকের ১৬ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬টিতেই জয় পেয়েছে তৃণমূল। অন্যদিকে, গাইঘাটা ব্লকের ১৩টির মধ্যে ১২টি পঞ্চায়েতই দখল করে তৃণমূল। পাশাপাশি, বাগদা ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টি তেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: মিলল না ‘রক্ষাকবচ’, নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে ED, CBI
এ দিন পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার শুরুর দিকে এই মহকুমার একাধিক পঞ্চায়েতে বিজেপির ভাল ফলের খবর আসলেও শেষ মুহূর্তে তা ঘুরে যায়। অর্থাৎ দ্বিতীয় রাউন্ডের গণনার শেষে দেখা যায় ফলাফল তৃণমূলের দিকে চলে গিয়েছে। বনগাঁ মহকুমায় ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। এই ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৬টিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল।
উত্তরবঙ্গ বিজেপির (BJP) বড় ভরসা ছিল। সেখান থেকে একাধিক জেলাপরিষদ আসবে বলে দাবি করেছিলেন রাজ্য নেতারা। কিন্তু হতাশ হতে হয়েছে তাদের। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাথমিক ফল দেখে জেলা পরিষদ দখলের আশাও মঙ্গলবার রাতে ছেড়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। গননা চলাকালীন রাত সাড়ে ন’টার খবর, কোচবিহারে গ্রাম পঞ্চায়েতে যেখানে তৃণমূল পেয়েছে ১,৪৩৮টি আসন। সেখানে বিজেপির প্রাপ্ত আসন ৪৭২টি। আবার আলিপুরদুয়ারে গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬৩৩টি আসন এসেছে তৃণমূলের দখলে। তখন বিজেপির দখলে ২৭৪টি আসন।
জলপাইগুড়িতেও গ্রাম পঞ্চায়েতে ৫৭৩টি আসন তৃণমূল পেয়েছে। সেখানে বিজেপির আসনসংখ্যা ২৪৮টি। অথচ উনিশের লোকসভা নির্বাচনে এই তিনটি লোকসভা কেন্দ্র বিজেপির দখলে ছিল। এবার পঞ্চায়েত ভোটে উত্তরবঙ্গের চা বাগান এলাকায় আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে শাসক শিবির দায়িত্ব দিয়েছিল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই দুই এলাকায় চমকপ্রদ ফল করেছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন: Rajya Sabha Election: ‘বঙ্গভঙ্গের’ দাবি তোলা অনন্ত মহারাজ রাজ্যসভায় বিজেপির প্রার্থী