ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ পর্যটন গ্রামের (Best Tourism Village of India) স্বীকৃতি পেল মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম ব্লকের কিরীটেশ্বরী গ্রাম।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন ‘আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি মুর্শিদাবাদ জেলার কিরীটেশ্বরী গ্রামকে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক দেশের সেরা পর্যটন গ্রাম হিসেবে বেছে নিয়েছে। ২০২৩ সালের ‘Best Tourism Village Competition’-এ আবেদনের ভিত্তিতে এই গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়েছে। দেশের ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে এই প্রতিযোগিতায় মোট ৭৯৫টি আবেদন জমা পড়েছিল। ২৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের তরফে এই অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হবে। আমি কিরীটেশ্বরী গ্রামের সকল বাসিন্দাদের অভিনন্দন জানাই। জয় বাংলা।’
Glad to share and announce that Kiriteshwari in the Murshidabad district of West Bengal has been selected by the Ministry of Tourism, Government of India, as the Best Tourism Village of India. The selection has happened in the Best Tourism Village Competition,2023, from among 795…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) September 21, 2023
কিরীটেশ্বরী শক্তিপীঠগুলির অন্যতম। মুর্শিদাবাদের ‘কিরীটকণা’ বা ‘কিরীটকোণা’ গ্রামে অবস্থিত এটি। বর্তমান মন্দিরটি বেশি পুরানো নয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, লালগোলার রাজা ভগবান রায়, মুঘল সম্রাট আকবরের থেকে এই মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পান। প্রাচীন মন্দিরটি ভেঙে পড়লে ১৯ শতক নাগাদ লালগোলার সেই সময়কার রাজা দর্পনারায়ণ রায় নতুন মন্দির নির্মাণ করান। দর্পনারায়ণ ছিলেন ভগবান রায়েরই বংশধর।
আরও পড়ুন: Mandarmani: পরনে অন্তর্বাস! মন্দারমণির সমুদ্রসৈকতে উদ্ধার তরুণীর অর্ধনগ্ন দেহ
এখানে সতীর ‘কিরীট’ অর্থাৎ মুকুটের কণা পড়েছিল। তাই দেবীকে ‘মুকুটেশ্বরী’ বলেও ডাকা হয় এখানে। যেহেতু এখানে দেবীর কোনও অঙ্গ পতিত হয়নি, তাই এই স্থানটিকে অনেকে ‘পূর্ণ পীঠস্থান’ না বলে ‘উপপীঠ’ বলেন। তবে তাঁরা যা-ই বলুন না কেন, সাধারণ ভক্তের মনে এই পীঠের গুরুত্বে কোনও টোল পড়েনি। জানা যায়, রাজা রামকৃষ্ণ রায়ের মতো সিদ্ধতান্ত্রিক এখানে পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন।
মন্দিরে অবশ্য দেবীর কোনও প্রতিমূর্তি নেই, একটি উঁচু পাথরের উপর বেদী আছে; এই বেদীর উপর বেদীর মতোই একটি ছোট প্রস্তরখণ্ড আছে, যা দেবীর কিরীট বলে পুজো করা হয়। নিয়মমতো এখানে যথারীতি দেবীর ভৈরবও আছেন। এখানে ভৈরবের নাম ‘সংবর্ত’। তবে ‘সংবর্ত’ বলে যে মূর্তিটি পূজা করা হয়, বলা হয় সেটি আসলে একটি বুদ্ধমূর্তি। যা রাঢ়ের এই অঞ্চলের সঙ্গে বৌদ্ধসংস্কৃতির প্রাচীন সম্পর্কের পরিচয় দেয়।
দুর্গাপুজো, কালীপুজো ছাড়াও এখানে দেবীর বিশেষ পুজো হয় মাঘ মাসের রটন্তী অমাবস্যায়। পৌষ মাসের প্রতি মঙ্গলবার এখানে একটি বিশেষ মেলা বসে। সেই মেলার সূচনা রাজা দর্পনারায়ণের আমল থেকেই। বর্তমানে মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ এবং শ্রীবৃদ্ধির দায়িত্ব রয়েছে মন্দির কমিটির উপর। কমিটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য মুসলিম। মন্দিরের সেবাইত সূত্রে জানা গিয়েছে, মুকুন্দবাগ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা প্রয়াত আব্দুল হাকিম মণ্ডলের ইচ্ছা অনুসারে তার পুত্রেরা মন্দির সংলগ্ন জমিটি দান করেছিলেন। দান করা সেই জমির একাংশেও গড়ে উঠেছে একটি মন্দির। এই গ্রাম ভারতসেরা শ্রেষ্ঠ পর্যটন গ্রামের স্বীকৃতি মেলায় খুশির হাওয়া হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে।
আরও পড়ুন: Hilsa Fish: পুজোর উপহার! বাংলাদেশ থেকে আসছে ৩৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ