ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল গাজায় একদিকে বোমাবর্ষণ চলছে। অন্যদিকে তেল আবিবের হোটেলরুমে জড়ো হওয়া রাজনীতিবিদ ও জেনারেলরা এসব কর্মকাণ্ডে সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়লেন। রুদ্ধদ্বার বৈঠক সম্পর্কে অবগত এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছেন।
আইরিশ ক্যাথলিক বংশোদ্ভূত বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি তার অনুরাগ প্রকাশে অতীতেও একই ধরনের শব্দ ব্যবহার করেছেন। বাইডেন মূলত ‘ইসরায়েলের বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত। ইসরায়েলের সঙ্গে তার বন্ধন দীর্ঘদিনের। এই বন্ধনই ইসরায়েল-সম্পর্কিত নীতি ও চলমান সংঘাতে তিনি ইসরায়েলকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের সাবেক আলোচক ও লেখক অ্যারন ডেভিড মিলার বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে বাইডেনের সম্পর্ক তার ‘রাজনৈতিক ডিএনএতে’ গভীরভাবে জড়িত। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ও তার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্যদের আশ্বস্ত করে বাইডেন বলেন, ‘আমি মনে করি না যে জায়নবাদী হওয়ার জন্য আপনাকে একজন ইহুদিই হতে হবে এবং আমি নিজেই একজন জায়নবাদী।’
অতীতে যাই হোক, এখন ইহুদীবাদ ও ইসরায়েল সমার্থক। জায়নবাদ মানেই ইহুদি নয়।জায়নবাদ ইহুদিদের থেকেই জন্ম নেওয়া একটি বিশেষ আন্দোলন।খানিকটা ভারতের আরএসএসের মত। এ আন্দোলনের লক্ষ্য হলো ইসা মসীহের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে হাইকেলে সুলেমানিকে পুনঃনির্মাণ করা, জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র কায়েম করা এবং এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পুরো পৃথিবীকে ইহুদি কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ করা। উল্লেখ্য, হাইকেলে সুলাইমান হলো- ইহুদিদের ধারণা মতে মসজিদে আকসার সন্নিকটে হযরত দাউদ ও সুলায়মান আ. কর্তৃক নির্মিত একটি উপাসনালয়।
আধুনিক জায়নবাদের উত্থান উনবিংশ শতাব্দির শেষদিকে অস্ট্রিয়ায়। ১৮৮০ সালে নাকান বেরেনবুয়ান নামে এক অস্ট্রিয়ান ইহুদী ইহুদীদের জেরুজালেমে ফিরে যাওয়ার জন্য একটি আন্দোলনের প্রস্তাব করেন। ১৮৯৬ সালে অস্ট্রিয়ান এক দুর্ধর্ষ ইহুদী সাংবাদিক ডঃ থিওডর হার্জেল (Theodor Herzl -১৮৬০-১৯০৪) তার রচিত ’ডের জুডেন্সটাট’ বা The Jewish State গ্রন্থটির মাধ্যমে জায়োনিস্ট আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়ন করেন এবং International Zionist Organization নামে একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলেন।
এই ইহুদী সাংবাদিকের নেতৃত্বেই ১৮৯৭ সালের ২৯ ও ৩০ আগস্টে অনুষ্ঠিত সম্মেলন হয় সুইজারল্যান্ডের বাযিল (BAZIL) নগরীতে। অতঃপর বিশ্বের ৩০টি ইহুদী সংগঠনের প্রায় ৩০০ জন ইহুদী নেতা ইহুদীবাদকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয় এবং সারা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পিত নীল-নকশা প্রণয়ন করেন। পরবর্তীতে যে পরিকল্পনাটি ২৪ প্রটোকল আকারে প্রণীত হয়।
“সিয়োনবাদ” বা জায়োনবাদ শব্দটি এসেছে হিব্রু সিয়োন (হিব্রু ভাষায়: ציון, Tzi-yon) থেকে যা জেরুসালেম বা জেরুজালেম নগরীকে নির্দেশ করে। ১৯ শতকের শেষের দিকে পূর্ব ইউরোপ জুড়ে, অসংখ্য ইহুদি গোষ্ঠী ইহুদিদের স্বদেশে জাতীয় পুনর্বাসনের প্রচার করেছিল। সেইসাথে হিব্রু ভাষার পুনরুজ্জীবন ও চাষাবাদে তারা জোর দিয়েছিল। এই গোষ্ঠীগুলিকে সম্মিলিতভাবে “সিয়োনের প্রেমিক” প্রেমিক বলা হত। শব্দটির প্রথম ব্যবহার অস্ট্রিয়ান নাথান বার্নবাউম। তিনি ছিলেন কাদিমাহ জাতীয়তাবাদী ইহুদি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা।গড়ে তোলা হয় বহিরাগত ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনিদের থেকে জমি কেনা বা লিজ গ্রহণে অর্থায়নের জন্য উদ্দেশ্যে জুয়িশ ন্যাশনাল ফান্ড (Jewish National Fund). পূর্ব থেকে বিচ্ছিন্নভাবে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে আসতে শুরু করলেও উল্লেখযোগ্য হারে আসতে শুরু করে ১৮৮০ থেকে ।