৭৯ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী অঞ্জনা ভৌমিক। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। শুক্রবার (১৬.০২.২০২৪) রাতে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অঞ্জনাকে। শনিবার সকালে সেই হাসপাতালেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন অঞ্জনা। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা শুরু হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। শেষরক্ষা আর হল না।
বাংলা সিনেমার সূবর্ণ যুগের এক অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন অঞ্জনা। একাধিক মনে রাখার মতো ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। ‘চৌরঙ্গী’, ‘থানা থেকে আসছি’, ‘নায়িকা সংবাদ’-এর মতো ছবিতে দুর্দান্ত পারফর্ম করে নিজের সাক্ষর রেখেছেন অঞ্জনা। উত্তমকুমারের এই নায়িকাকে সহজেই ভালবেসে ফেলেন দর্শক। কিন্তু ষাট এবং আশির দশকে অভিনয় করার পর হঠাৎই অন্তরালে চলে যান অঞ্জনা। আর তাঁকে দেখা যায়নি সিনেমার পর্দায়। পরিবার বলতে দুই কন্যা – নীলাঞ্জনা এবং চন্দনা। দুই মেয়েই অভিনেত্রী ছিলেন। অভিনেতা যিশু সেনগুপ্তকে বিয়ে করার পর নীলাঞ্জনাও ছাড়েন অভিনয়। তিনি এখন প্রযোজক। চন্দনাও অভিনয় করেন না আর।
অঞ্জনা ভৌমিকের মৃত্যুর খবর ছড়াতে শোকস্তব্ধ টলিউড। পরিচালক অরিন্দম শীল, সৃজিত মুখোপাধ্যায়-সহ সমস্ত প্রথম সারির ব্যক্তিত্বরা তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে হাসপাতালে উপস্থিত। প্রয়াত অভিনেত্রীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সামাজিক পাতায় শোক জানিয়েছেন অরিন্দম। তাঁর কলমে, ‘পর্দায় আপনি অভিনয় প্রতিভায় আগুন জ্বালাতেন। ব্যক্তিগত জীবনে ভীষণ ভালমানুষ ছিলেন। আপনার অভাব পূরণ হবে না কোনওদিন। যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন।’
১৯৪০ সালের ৩০ ডিসেম্বর কোচবিহারে জন্ম অঞ্জনার। সেই সময় তাঁর নাম আরতি ভৌমিক। পড়াশোনা শেষের পরে তিনি বিয়ে করেন নৌ অফিসার অনিল শর্মাকে। তাঁদের দুই সন্তান নীলাঞ্জনা-চন্দনা। অঞ্জনার প্রথম ছবি ১৯৬৪ সালে, পীযূষ বসুর ‘অনুষ্টুপ ছন্দ’তে। তখন তিনি মাত্র ২০। এই সময় তাঁর নাম বদলে আরতি থেকে হয় অঞ্জনা। প্রথম ছবিতেই নজর কেড়েছিলেন তিনি। এবং এর পর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। উত্তমকুমারের সঙ্গে অঞ্জনার জুটি হিট। তাঁরা একসঙ্গে পর্দা ভাগ করেছিলেন ‘চৌরঙ্গী’, ‘নায়িকা সংবাদ’, ‘কখনও মেঘ’, ‘থানা থেকে আসছি’, ‘রৌদ্রছায়া’, ‘রাজদ্রোহী’, ‘শুকসারী’ ছবিতে। প্রত্যেকটি ছবি এবং তার গানগুলো জনপ্রিয়। ফলে সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া চৌধুরী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের প্রবল উপস্থিতির পরেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন ‘মহানায়কের নায়িকা’। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের তাঁর ছবি ‘মহাশ্বেতা’ দর্শক-সমালোচক প্রশংসিত।