ভারতে পরিষেবা বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিল হোয়াটসঅ্যাপ। ২০২১ সালে দেশে লাগু হওয়া তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৪(২) ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাই কোর্টে মামলা করেছে ফেসবুক (বর্তমানে মেটা) ও হোয়াটসঅ্যাপ। শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতেই জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, যদি এনক্রিপশন ভাঙতে বাধ্য করা হয় তাহলে তারা এদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। কিন্তু কোনওভাবেই ইউজারদের গোপনীয়তা সংক্রান্ত নিয়ম তারা লঙ্ঘন করবে না।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইনফরমেশন টেকনোলজি রুল, ২০২১ ঘোষণা করে কেন্দ্র। সেখানে করা হয়েছিল টুইটার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের মত সমাজমাধ্যমকে নতুন নিয়ম মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে তথ্যের উৎস সন্ধান করতে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ভাঙতে হবে। হোয়াটসঅ্যাপের দাবি, গ্রাহকদের তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সবই যদি খুল্লমখুল্লা করে দেওয়া হয় তাহলে ইউজারদের সুরক্ষা ও গোপনীয়তা বলে কিছুই থাকবে না। এটা তাদের নীতির বিরুদ্ধে।
হোয়াটসঅ্যাপ তথা মেটার আইনজীবী তেজস কারিয়া আদালতে জানান, যদি এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ভাঙতে হয় তাহলে ভারতে পরিষেবা বন্ধ করতে তারা বাধ্য হবে। কারণ হোয়াটসঅ্যাপ এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যারা গ্রাহকদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করে চলে। এই সুবিধার জন্যই হোয়াটসঅ্যাপে গ্রাহক সংখ্যা এত বেশি। কিন্তু যদি সেই নিয়মেই হস্তক্ষেপ করে সরকার, তাহলে এ দেশে ব্যবসা করে আর কোনও লাভই নেই।
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এই নিয়ম মানতে গেলে প্রতি বছর কোটি কোটি মেসেজ সংরক্ষণ করতে হবে। এ এমন এক চাহিদা, যা বিশ্বের কোনও দেশে লভ্য নয়। এবার তা করতে গেলে বছরের পর বছর ধরে কোটি কোটি মেসেজ সংরক্ষণ করেই যেতে হবে। এর পর প্রধান বিচারপতি মনমোহন এবং বিচারপতি মনমীৎ প্রীতম সিংহ অরোরার বেঞ্চ তাঁর কাছে জানতে চায়, ”বিশ্বে কোনও দেশই কি এই ধরনের তথ্য জানতে চায় না? এমনকী দক্ষিণ আমেরিকাতেও নয়?” জবাবে কারিয়া বলেন, ”না, এমনকী ব্রাজিলেও নয়।”
বস্তুত, হোয়াটসঅ্যাপের সবচেয়ে বড় বাজার ভারতে। ৯০ কোটির বেশি ইউজার ভারত থেকেই। কাজেই এ দেশে হঠাৎ করে হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ হয়ে গেলে বড় সমস্যা তৈরি হবে। ১৪ আগস্ট এই মামলাটি ফের দিল্লি হাই কোর্টে শুনানি হবে।
এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন হল একটি প্রাইভেসি ফিচার যা অনেক বছর ধরেই হোয়াটসঅ্যাপে রয়েছে। এর সুবিধা হল প্রেরক বা সেন্ডার যা মেসেজ পাঠাচ্ছেন এবং যিনি রিসিভ করছেন তাঁরা দু’জন ছাড়া আর কেউ সেই মেসেজের ব্যাপারে জানতে পারবে না। সে মেসেজ হোক বা ছবি। এটাই হোয়াটসঅ্যাপের প্রাইভেসি পলিসি।