রাজ্যপালের বিরুদ্ধে উঠেছে শ্লীলতাহানির অভিযোগ। তা নিয়ে প্রথমবার মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রায়নার নির্বাচনী সভা থেকে সি ভি আনন্দ বোসকে একহাত নিলেন তিনি। শ্লীলতাহানির অভিযোগ আবহে রাজভবনে মোদী রাত্রিবাস করলেও, কেন এ বিষয়ে একটি কথাও বললেন না সে প্রশ্নও ছুড়ে দেন মমতা।
বৃহস্পতিবার রাতেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে হেয়ার স্ট্রিট থানায় রিপোর্ট লিখিয়েছেন এক মহিলা। নিজেকে রাজভবনের অস্থায়ী মহিলা কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে পুলিশকে তিনি জানান, রাজভবনে দু’বার শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন তিনি। যদিও বৃহস্পতিবারই একটি পাল্টা বিবৃতি দিয়ে ওই অভিযোগকে অস্বীকার করেছেন রাজ্যপাল। তিনি এ-ও জানান যে, অশুভ উদ্দেশ্যেই এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কিন্তু তাঁর বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হবে। ঘটনাচক্রে, এই সমস্ত ঘটনা যখন ঘটছে, সেই সময়েই প্রধানমন্ত্রী মোদী এসে পৌঁছন কলকাতায় এবং রাজভবনেই রাজ্যপালের অতিথি হয়ে রাত্রিবাস করেন বৃহস্পতিবার। শুক্রবার সেখান থেকে কৃষ্ণনগরে গিয়ে জনসভাও করেন। কিন্তু রাজভবন সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে কোনও কথাই বলেননি মোদী। মমতা তাঁকে বিঁধেছেন এই নীরবতা নিয়েই।
শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের রায়নায় জনসভা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘আপনি সন্দেশখালি নিয়ে অনেক কথা বলছেন, সন্দেশখালিতে এমন কোনও ঘটনা ঘটতে দিইনি। ওদের জমিজমা নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল, আমরাই অফিসার পাঠিয়ে তার সমাধান করে দিয়েছি। কিন্তু আপনি কী করেছেন? একটা ছোট্ট মেয়ে রাজভবনে চাকরি করত। তাঁর সঙ্গে কী ব্যবহার করেছেন রাজ্যপাল? আপনি আমায় কালকেও বলে পাঠিয়েছেন আমার মন্ত্রী কেন এসব বলেছেন। আমার কাছে এমন হাজারটা ঘটনা এসেছে। আমি কোনওদিন কিছু বলিনি। কিন্তু কালকের মেয়েটার কান্নায় আমার হৃদয় বিদীর্ণ হয়েছে। রাজ্যপাল পর পর দুবার শ্লীলতাহানি করেছে। আমি তো তাঁর কান্না দেখলাম। ভিডিও এসেছে। মন দিয়ে দেখেছি।’’
তিনি এই প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে বলেন, ”সেখানেই তো কাল আপনি থেকে এলেন। একটা কথাও তো বললেন না। আপনি আবার মা-বোনেদের সম্মান নিয়ে কথা বলেন! আপনার দাঁতের পাটিটাই খুলে পড়ে যাওয়া উচিত মিথ্যে কথা বলার জন্য।”
শুক্রবার মোদীকে যোগ্যদের চাকরি যাওয়া নিয়েও আক্রমণ করেছেন মমতা। শুক্রবারের জনসভায় মোদী বলেছিলেন, তিনি রাজ্য বিজেপিকে ইতিমধ্যেই এমন নির্দেশ দিয়েছেন যে, চাকরি হারানো যোগ্যদের আইনি ও সামাজিক লড়াইয়ে পাশে থাকতে হবে দলকে। তিনি এর জন্য একটি আইনি পরামর্শদাতা দল এবং সমাজমাধ্যম দল গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্বকে। এমনকি, সে কাজ হওয়ার গ্যারান্টিও দিয়েছেন মোদী। মমতার তাঁর সভায় বলেছেন, ‘‘আজ ভোটের দরকার। তাই আট দিন পরে এসে মোদী এ সব কথা বলছেন। আর এই আট দিনে আমরা সুপ্রিম কোর্টে কেস লড়তে শুরু করে দিয়েছি। আর ২৬ হাজার চাকরি তো আপনি খেয়েছেন।’’
মোদীকে কটাক্ষ করে মমতা বলেছেন, ‘‘এরা এক দিকে চাকরি খাবে, আর এক দিকে বড় বড় কথাও বলব। আসলে এরা সাপের গালেও চুমু খায়, ব্যাঙের গালেও চুমু খায়। আয়নায় নিজের মুখ দেখুন। ত্রিপুরায় বলেছিলেন ক্ষমতায় এসে সিপিএমের জমানায় যাওয়া ১০ হাজার চাকরি ফিরিয়ে দেব। আজ পর্যন্ত দিয়েছেন?’’