বাংলার রাজ্যপাল আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানায় বৃহস্পতিবার শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বাংলায় এই ঘটনা নজিরবিহীন।
সর্বসাধারণের ক্ষেত্রে এই ধরনের অভিযোগ জমা হলে অপরাধের প্রকৃতি অর্থাৎ তা কতটা গুরুতর সেটা বিচার বিশ্লেষণ করে পুলিশ পদক্ষেপ করে থাকে। প্রয়োজনে অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করে। আবার পুলিশ চাইলে গ্রেফতার না করে থানায় ডেকে জেরার ভিত্তিতে সরাসরি আদালতে চার্জশিট জমা করে দিতে পারে। এরপর আদালতের শুনানিতে বিচারক ঠিক করেন অভিযোগের সত্যতা। কিন্তু প্রশ্ন হল, শ্লীলতাহানির মতো গুরুতর অভিযোগে কি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তদন্ত করা যায়? নাকি সাংবিধানিক (Constitution) রক্ষাকবচের আড়ালে এ যাত্রায় তদন্ত প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাবেন তিনি?
সংবিধানের ৩৬১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের রাষ্ট্রপতি ও কোনও রাজ্যের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যায় না। এই ‘সাংবিধানিক রক্ষাকবচ’ থাকার কারণেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ওই মহিলা কর্মী হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জমা দিলেও আপাতত এফআইআর করা যায়নি।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৬১ অনুসারে, মেয়াদ চলাকালীন রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি পদক্ষেপ করা যায় না। এমনকী কোনও আদালতও যদি রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, তাহলেও তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা যাবে না। সর্বোপরি সংবিধানের ওই ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালেরা কোনও আদালতকেও জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়। সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে, এমনকী রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল থাকাকালে ব্যক্তিগত কোনও বিষয়ে দেওয়ানি মামলা করতে হলে দু-মাস আগে নোটিস দিতে হবে।
যদিও প্রাক্তন রাজ্যপালরা বলছেন, রাজ্যপালদের মেয়াদ শেষের পর তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিয়ে মামলা করা যেতে পারে। তাছাড়া মেয়াদ চলাকালীন জমিজমা সংক্রান্ত কোনও দেওয়ানি মামলা করা যেতেই পারে। তবে কোনওভাবেই ফৌজদারি মামলা নয়। তবে এই ধরনের অভিযোগ ওঠার পর রাজ্যপালকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নজির ভারতের ইতিহাসে রয়েছে। ২০০৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের তৎকালীন রাজ্যপাল এনডি তিওয়ারির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছিল। সেসময় তাঁকে রাজ্যপাল পদ থেকে সরিয়ে দেয় তৎকালীন কংগ্রেস সরকার।