‘যদি আমি হিন্দু-মুসলিম করি, তাহলে সামাজিক জীবনে থাকার যোগ্যতা হারাব।’ সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ‘অভিযোগে’র এভাবেই জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার বারাণসীতে জনসভা করেছেন তিনি। এর পর এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় এই প্রসঙ্গ ওঠে। আর তখনই মোদি বলেন, ”আমি ভোট ব্যাঙ্কের জন্য কাজ করি না। আমি বিশ্বাস করি সব কা সাথ, সব কা বিকাশে।”
যদিও গতমাসে রাজস্থানের সভায় তিনি এই ভোটে প্রথমবার খুল্লামখুল্লা ধর্মের তাস খেলেছিলেন। কংগ্রেসের ইস্তাহারকে মুসলিম লিগের ঘোষণাপত্র বলে আখ্যায়িত করে মোদী বলেন, শতাব্দী প্রাচীন দলটি ক্ষমতায় এলে দেশের সম্পদ মুসলিমদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে। হিন্দু মহিলার মঙ্গলসূত্রও নিরাপদ নয়। মুসলিম পরিবারের জনসংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
দিনকয়েক আগে কর্নাটক বিজেপির (BJP) এক্স হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা হয় একটি কার্টুনের ভিডিও। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তফসিলি জাতি-উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির বরাদ্দ সংরক্ষণ মুসলিমদের হাতে তুলে দিচ্ছেন রাহুল গান্ধী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে দলের একাধিক নেতা সাম্প্রতিক সময়ে এমনই দাবি করছেন। মঙ্গলবার হাওড়ার আমতায় উলুবেড়িয়ার জনসভায় অমিত শাহের দাবি, “বাংলায় ইমামদের ভাতা দেওয়া হলেও মন্দিরের পুরোহিতদের ভাতা দেয় না মমতা দিদির সরকার।” এরপরই অমিত বলে বসেন, “দুর্গাপুজোয় মমতাদিদি ছুটি দেয় না, রমজানে ছুটি দেয়!”
এই পরিস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদীর মুখে ‘আমি বিভেদের রাজনীতি করিনা’ শোনা আর ভূতের মুখে রামনাম শোনা প্রায় সমার্থক। এই অবস্থায় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে মোদী হটাৎ কেন ব্যাকফুটে? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিভাজনের রাজনীতিও এ বারের ভোটে সে ভাবে হাওয়া তুলতে ব্যর্থ। উল্টো দিকে নানাবিধ কারণে বিজেপির বিরুদ্ধে যাদব ভোটের মতো দানা বেঁধেছে দলিত ভোটও। সে কারণে এখন মোদী ৪০০ আসনের লক্ষ্য ছেড়ে ভিন্ন বিষয়ে প্রচারে জোর দেওয়ার কৌশল করেছেন।
কোনও কোনও মহলের মতে, আন্তর্জাতিক দুনিয়ার প্রতিক্রিয়াও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে মোদীকে। ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর পীড়ন, বিদ্বেষের অভিযোগ নতুন নয়। তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইওরোপের বহু প্রতিষ্ঠান সরব। তারা স্বয়ং মোদীর বিরুদ্ধে বিভাজন উস্কে দেওয়ার অভিযোগ তুলে দিলে তা বিজেপি এবং ভারত সরকারের অস্বস্তির কারণ হবে। অন্যদিকে, দুবাই – আবু ধাবি থেকে লাগাতার বিনিয়োগ আসছে এখন এদেশে।বিভাজন রাজনীতি করলে সেই বিনিয়োগের পথ যে অচিরেই বন্ধ হবে – সেই বার্তাও পেয়েছেন মোদী। তাই এখন সুর নরম করে সংখ্যালঘুদের কাছে ‘আমি তোমাদেরই লোক’ প্রমাণের ব্যর্থ চেষ্টায় নেমে পড়েছেন।
মঙ্গলবার মোদীকে বলতে শোনা যায়, ”আমি স্তম্ভিত। কে বলল অনুপ্রবেশকারী আর বেশি সন্তানের প্রসঙ্গ তোলা মানেই মুসলিমদের কথা বলা হচ্ছে? এই সমস্যা দরিদ্র হিন্দু পরিবারেও রয়েছে। তারা নিজেদের সন্তানকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিতে পারছে না। আমি কখনও হিন্দু বা মুসলিমের নাম নিইনি। আমার কেবল আবেদন, আপনারা ততগুলিই সন্তানের জন্ম দিন যাদের আপনারা পালন করতে পারবেন।” তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কি মুসলিমদের সমর্থন চান। প্রধানমন্ত্রী ঘুরিয়ে জবাব দেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমার দেশবাসী আমাকে সমর্থন করবে। আমি কখনও হিন্দু-মুসলিম করি না। এটা আমার সংকল্প।’ সাক্ষাৎকারে মোদী আরও বলেছেন, ‘সরকার সুবিধা বিলির ব্যাপারে আমি একশো শতাংশ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চলি। ধর্ম-জাত ইত্যাদি দেখি না।’