NCERT Drops Ambedkar Chapter, Introduces ‘Indus-Saraswati Civilization’ In Class 6 Social Science Book

NCERT: বাদ জাতিভেদ নিয়ে আম্বেদকরের অভিজ্ঞতা, হরপ্পা সভ্যতা নাম পাল্টে হল ‘সিন্ধু-সরস্বতী’, বিতর্কে এনসিইআরটি

ফের পাঠ্যক্রমে বিকৃত ইতিহাস৷ আরও একবার সমালোচনার মুখে পড়ল ন্যাশেনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং বা এনসিইআরটি৷ পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ পড়ল ভারতীয় সমাজে বর্ণ ও জাতি ব্যবস্থার সমীকরণ। এমনকি হরপ্পা সভ্যতার নাম বদলে করা হল ‘সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতা’। ভারতের নিজস্ব মূল মধ্যরেখাও ছিল বলেও দাবি করা হল নয়া পাঠ্যবইয়ে।

ষষ্ঠ শ্রেণির সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে একাধিক পরিবর্তন এনেছে এনসিইআরটি৷ নতুন বইতে ভারতীয় সমাজের বর্ণনায় বেদের উল্লেখ থাকলেও বর্ণ ও জাতিবাদের কোনও উল্লেখ সেখানে করা হয়নি। নারীসমাজ এবং শূদ্রদের যে বেদ চর্চার অধিকারও ছিল না, বই থেকে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। জাতিভেদ নিয়ে বাবাসাহেব আম্বেদকরের অভিজ্ঞতার অংশটিও বাদ পড়েছে। পাশাপাশি নতুন বইয়ে হরপ্পা সভ্যতার নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সভ্যতার শুরু সংক্রান্ত অধ্যায়ে বহুবার সরস্বতী নদীর উল্লেখ করা হয়েছে। এই সরস্বতী নদীর অববাহিকাতেই একাধিক নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। বর্তমান ঘাঘর ও হাকরা নদীই পুরনো সরস্বতী নদী বলে বইয়ে দাবি করা হয়েছে।  ‘সিন্ধু-সরস্বতী’ সভ্যতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এনসিইআরটি’র ওই বইয়ে বলা হয়েছে, গ্রিনিচ মধ্যরেখা বিশ্বের প্রথম মূল মধ্যরেখা নয়। কয়েকশো বছর আগেই ভারতে এই ব্যবস্থা চালু ছিল। প্রাচীন উজ্জ্বয়িনী শহর জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার অন্যতম কেন্দ্র ছিল। প্রাচীন ভারতের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল। ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের বইয়েও এই মধ্যরেখাকে ধরেই বিভিন্ন হিসেব করা হয়েছে।  সব মিলিয়ে ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে আরও একবার বিদ্ধ হতে হল এনসিইআরটি-কে। তবে তাদের যুক্তি, ২০২০-র জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নয়া বই তৈরি করা হয়েছে।

এনসিইআরটি সূত্রে খবর, ইতিহাস, ভূগোল ও সিভিকসের পুরনো তিনটি বইয়ের বিষয়কে কাটছাঁট করে নতুন বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে।  মৌর্য্য সাম্রাজ্য, রাজা অশোক, অর্থশাস্ত্রের মতো বিভিন্ন বিষয় বাদ পড়েছে। নতুন বইয়ের ভূমিকায় এনসিইআরটির ডিরেক্টর দীনেশ সাকলানি জানিয়েছেন, বৃহত্তর ধারণায় নজর দেওয়ার জন্য পাঠ্যবস্তু যথাসম্ভব কম রাখা হয়েছে। এর জন্য ইতিহাস, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির বিভিন্ন অংশ একত্রিত করা হয়েছে। সিবিএসই বোর্ড এনসিইআরটির পাঠ্যক্রম মেনে চলে। আইসিএসসি ও আইএসসি-ও কোনও কোনও সময় এদের সিলেবাস অনুসরণ করে।

নরেন্দ্র মোদীর আমলে ইতিহাস বিকৃতি ও শিক্ষায় গেরুয়াকরণের অভিযোগ বারেবারেই উঠেছে। সরকারি ফরমান মেনে পাঠ্যপুস্তকে গেরুয়া শিবিরের মনপসন্দ বিষয়কে জায়গা দিতে দেখা গিয়েছে এনসিইআরটি’ কে । এবার একধাপ গিয়ে সুপ্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার নামই বদলে দেওয়া হল। পাঠ্যবিষয়ে এধরনের রদবদল শিক্ষার মানের উপর বুলডোজার চালানোর চেষ্টা বলে সরব হয়েছে শিক্ষামহল।

গত বছরই স্কুলের পাঠ্যক্রম সংশোধনের উদ্দেশ্যে সোশ্যাল সায়েন্সের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল এনসিইআরটি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশনাল প্ল‌্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর চ্যান্সেলর এম সি পন্থের নেতৃত্বাধীন ১৯ সদস্যের কমিটি এই নয়া পাঠ্যবইয়ের (Text book) দায়িত্বে ছিল। ওই কমিটিতে ছিলেন লেখিকা সুধা মূর্তি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারপার্সন বিবেক দেবরায়, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের শাখা সংগঠন ‘সংস্কৃত ভারতী’র প্রতিষ্ঠাতা চামু কৃষ্ণ শাস্ত্রী, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মঞ্জুল ভার্গব এবং সংগীতশিল্পী শংকর মহাদেবন। আর সেই কমিটিই পাঠ্যবইতে ‘ইন্ডিয়া’-নামটি ‘ভারত’-এ পরিবর্তন করার সুপারিশ ছিল।

কেন এই পরিবর্তন প্রশ্ন করা হলে কমিটির চেয়ারপার্সন জানান, ভারত অনেক পুরনো নাম। ৭০০০ বছরের পুরনো বিষ্ণু পুরাণের মতো প্রাচীন ইতিহাসেও ‘ভারত’ নামটির উল্লেখ রয়েছে। আর ‘ইন্ডিয়া’ নামটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিষ্ঠার পরই বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। তাই পড়ুয়াদের পাঠ্যবইয়ে ‘ভারত’ নামটি ব্যবহারের সুপারিশ করছে কমিটি।