জামিনই নিয়ম, জেল ব্যতিক্রম–আইনের এই সাধারণ নীতি ইউএপিএ মামলাতেও সমান প্রযোজ্য বলে মনে করিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়দানের অভিযোগে ইউএপিএ-র ধারায় মামলায় দু’বছরের বেশি জেলবন্দি বিহারের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল জালালুদ্দিন খানের জামিন মঞ্জুর করে বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসিহ-র বেঞ্চ। বিচারপতি ওকা তাঁদের নির্দেশ পড়ার সময়ে বলেন, ‘‘জামিন হচ্ছে নিয়ম, জেল হল ব্যতিক্রম। বিশেষ আইনের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। যেখানে জামিন অনুমোদন করা সম্ভব, আদালত যদি তা মঞ্জুর না করে, তা হলে তা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১-এ দেওয়া অধিকারের বিরোধী হয়ে পড়ে।’’ বিচারপতিরা জানান, বর্তমান মামলাটিতে জামিন দেওয়ার শর্ত কঠিন হলেও আইন অনুমোদন করলে জামিন দেওয়া যেতেই পারে।
জালালুদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পটনার কাছে ফুলওয়াড়িশরিফে নিজের বাড়ির দোতলা তিনি ভাড়া দিয়েছিলেন এমন কয়েক জনকে যাঁরা নিষিদ্ধ সংগঠন পিএফআই-এর সদস্য। সেখানে নাশকতার ছক কষা চলছিল বলে এনআইএ-র দাবি। প্রধানমন্ত্রীর পটনা সফরে গোলমাল পাকানোরও নাকি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছিল। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, এনআইএ-র চার্জশিটে কিন্তু কোথাও নাশকতায় জালালুদ্দিনের জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ নেই।
বাড়ির দোতলার ভাড়াটেরা কী করছেন–তাঁর সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত কনস্টেবলের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিতই হয়নি তদন্তে। তিনি সন্ত্রাসবাদী কাজে মদত দিয়েছিলেন বলেও প্রমাণ নেই। এই অবস্থায় এক জন নাগরিককে বন্দি করে রাখা যায় না। এর আগে পাটনার এনআইএ-র বিশেষ আদালত অবশ্য তাঁর জামিনের আর্জি খারিজ করেছিল। হাইকোর্টেও সুরাহা পাননি জালালুদ্দিন। সর্বত্রই বাধা হয়েছে ইউএপিএ। বিচারপতি অভয় ওকা ও বিচারপতি আগস্টিন জর্জ মসীহের বেঞ্চ আজ বলেছে, ‘‘যখন জামিন দেওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকবে, সেই ব্যাপারে আদালতের দ্বিধা থাকা উচিত নয়। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়তো গুরুতর, কিন্তু আদালতের দায়িত্ব আইন মেনে সেই মামলায় জামিন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা।’’
এই রায় সে দিক থেকে শুধু জালালুদ্দিনই নয়, আরও অনেক ইউএপিএ বন্দির ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ইউএপিএ হলো তেমনই এক একুশে আইন যেখানে ‘প্রসেস ইজ পানিশমেন্ট’। বিচার কবে শেষ হবে, তাতে কী হবে–সে অপেক্ষায় থাকতে থাকতেই লম্বা সময় জেলে কেটে যায় অভিযুক্তের।
বিচারে মুক্তি পেলেও জীবনের অনেকগুলি বছর নষ্ট হয়ে, দীর্ষ সময় সমাজ ও পরিবার বিচ্ছিন্ন থেকে মানুষটি শরীরে-মনে শেষ হয়ে যান। সবার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত দৌড়নোও সম্ভব হয় না। আইনজীবীরা মনে করাচ্ছেন, প্রিজাম্পশন অফ ইনোসেন্স আনটিল প্রুভেন গিল্টি (অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত নিরপরাধ ধরা) যেমন ন্যায়বিচারের অন্যতম ভিত্তি, তেমনই বেল ইজ রুল, জেল ইজ একসেপশন–এটাও সেই ১৯৭৭-এ বলে গিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের তদানীন্তন বিচারপতি কৃষ্ণ আইয়ার। কিন্তু ইউএপিএ-র মতো ‘বিশেষ আইনে’ বার বারই বিপর্যস্ত হচ্ছে নাগরিকের মৌলিক অধিকার।