আরজি করের শিক্ষার্থী পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করা থেকে শুরু করে ময়নাতদন্ত—সব নিয়ে কার্যত তুলোধনা করল সুপ্রিম কোর্ট। এমনই প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে দিল যে উত্তর দিতে গিয়ে থতমত হয়ে গেলেন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিবাল।
আরজি কর-কাণ্ডে ‘খটকা’ লাগছে সু্প্রিম কোর্টের। গত ৯ অগস্ট ভোরে চিকিৎসক খুনের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে ওই দিন রাতে ঘটনাস্থল সিল করা পর্যন্ত যে ঘটনাপরম্পরা আদালতে পেশ করা হয়েছে, তাতেই বেড়েছে সেই ‘খটকা’। বিচারপতিরা সময় ধরে ধরে জানতে চেয়েছেন তাঁদের মনে হওয়া গরমিলগুলির ব্যাখ্যা কী? উত্তর জেনেও শেষ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হতে পারেনি সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি পারদিওয়ালা শুনানির এক পর্যায়ে বলেন, ‘‘অবাক হচ্ছি, ময়নাতদন্তের আগেই বলে দেওয়া হল অস্বাভাবিক মৃত্যু? এটা কী ভাবে সম্ভব? তা হলে ময়না তদন্তের প্রয়োজনই কী ছিল?” আবার পরে এ ব্যাপারে রাজ্যের সংশোধিত ব্যাখ্যা শুনে তিনিই বলেছেন, ‘‘ময়নাতদন্তের পরই বা অস্বাভাবিক মৃত্যু বলা হয় কী করে? তখন তো মৃত্যুর কারণ জেনেই গিয়েছে পুলিশ!’’
এদিন শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, “মিস্টার সিবাল, সবচেয়ে উদ্বেগের হল, ঘটনার জিডি এন্ট্রি হয়েছে ৯ অগস্ট সকাল ১০টা বেজে ১০ মিনিটে। আর ক্রাইম সিনকে সুরক্ষিত করা হয়েছে রাত সাড়ে ১১টার পর! এতক্ষণ ধরে কী চলছিল?”
প্রধান বিচারপতি এই উদ্বেগ প্রকাশের পরই সিবালকে উপর্যুপরি প্রশ্ন করেন বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা। এদিন সিবিআই ও রাজ্য সরকার দুজনেই আরজি কর কাণ্ড নিয়ে স্ট্যাটাস রিপোর্ট পেশ করেছে সুপ্রিম কোর্টে। সেই রিপোর্ট হাতে নিয়েই প্রশ্ন করতে থাকেন বিচারপতি পারদিওয়ালা। তিনি সিবালের উদ্দেশে বলেন, “ময়না তদন্ত কখন হয়েছে?”
জবাবে কপিল সিবাল বলেন, ময়না তদন্ত হয়েছে সন্ধে ৬টা থেকে ৭টা নাগাদ। তা শুনেই বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা বলেন, “ময়নাতদন্ত হয়েছে সন্ধে ৬টার সময়ে আর অস্বাভাবিক মৃত্যুর এফআইআর দায়ের হয়েছে রাত সাড়ে ১১টায়! আপনার রাজ্য যা করেছে, আমার ৩০ বছরের কর্মজীবনে এমনটা আমি কখনও দেখিনি! এফআইআর দায়ের করার আগেই ময়না তদন্ত হয়ে গেল!”
বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এর পরই প্রশ্ন করেন, ‘পঞ্চনামা কখন লেখা হয়?’ জবাবে সিবাল বলেন, ‘বিকেল ৪টে ২০ থেকে ৪ টে ৪০ মিনিটে’। তা শুনে বিচারপতি বলেন, আমাদের হাতে যে রিপোর্ট রয়েছে তাতে পরিষ্কার যে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে পঞ্চনামা ও ময়না তদন্তের পর।
আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় সিবিআইয়ের কাছে তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার সেই রিপোর্ট জমা দিয়ে সিবিআই আদালতকে বলে, ‘‘ঘটনার পাঁচ দিন পরে তদন্ত করতে নেমেছে তারা। তবে তত দিনে সব কিছু বদলে গিয়েছে।’’ যদিও রাজ্য সিবিআইয়ের দাবিকে নস্যাৎ করে বলে, তাদের কাছে ঘটনার সম্পূর্ণ ‘টাইমলাইন’ রয়েছে। রয়েছে ‘ভিডিয়োগ্রাফি’ও। তাই সিবিআই যে দাবি করছে, তা সত্য নয়। কিছুই বদলে যায়নি। রাজ্যের তরফে আদালতে হাজির ছিলেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। অন্য দিকে, সিবিআইয়ের তরফে সওয়াল করছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। এই দুই আইনজীবীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার আরজি করের ঘটনা পরম্পরা নিয়ে তর্ক চলেছে সুপ্রিম কোর্টে। তিন বিচারপতি বার বার প্রশ্ন তুলেছেন, ঘটনা পরম্পরার সত্যাসত্য নিয়ে।
বৃহস্পতিবার আরজি কর মামলার শুনানি ছিল প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে।