সালাতুল হাজাত (আরবিতে: صلاة الحاجة) হলো একটি বিশেষ নফল নামাজ, যা কোনো ব্যক্তিগত প্রয়োজন বা বিপদের সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য ও দোয়া কামনা করার জন্য পড়া হয়। ইসলামে এ নামাজ বিশেষভাবে উল্লেখিত আছে, যা একজন মুমিনকে আল্লাহর নিকট তাঁর সমস্যার সমাধান চাইতে উৎসাহিত করে। এটি এক ধরনের ইবাদত, যার মাধ্যমে বান্দা সরাসরি আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে।
সালাতুল হাজাতের গুরুত্ব ও ফজিলত
ইসলামের বিভিন্ন হাদিস ও বর্ণনায় সালাতুল হাজাতের ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের শিখিয়েছেন, যখনই আমরা কোনো প্রয়োজনীয় সমস্যার সম্মুখীন হই বা কোনো বিশেষ অনুরোধ থাকে, তখন আমরা আল্লাহর নিকট সালাতুল হাজাতের মাধ্যমে সাহায্য চাইতে পারি। এই নামাজের মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর রহমত এবং মাগফিরাত প্রার্থনা করেন।
হাদিস থেকে প্রমাণ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তির আল্লাহর নিকট অথবা কোনো মানুষের কাছে কিছু প্রার্থনা করার প্রয়োজন হয়, তাকে ওজু করতে হবে, ভালোভাবে ওজু করবে, এরপর দুই রাকাত নামাজ পড়বে।” (তিরমিজি ৪৭৯)pa
সালাতুল হাজাতের নিয়ম
সালাতুল হাজাত মূলত দুই রাকাত নফল নামাজ হিসেবে আদায় করা হয়। এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই, তবে যেকোনো সময়ই এই নামাজ পড়া যায়, তবে ফরজ নামাজের নিষিদ্ধ সময়গুলো এড়িয়ে যেতে হবে।
নামাজের নিয়ম:
নিয়ত: মনে মনে নিয়ত করতে হবে যে আপনি আল্লাহর জন্য দুই রাকাত হাজাতের নামাজ আদায় করছেন।
প্রথম রাকাত: সূরা ফাতিহা পাঠের পর যেকোনো সূরা পড়তে পারেন। সূরা ইখলাস বা সূরা কাওসার পড়া উত্তম।
দ্বিতীয় রাকাত: একইভাবে সূরা ফাতিহা ও অন্য কোনো ছোট সূরা পড়ুন।
সালাম ফেরানো: দুই রাকাত নামাজ শেষ করার পর সালাম ফেরাতে হবে।
নামাজের পর বিশেষ দোয়া
নামাজ শেষে আল্লাহর নিকট দোয়া করবেন। আপনি আপনার প্রয়োজনীয় বিষয়ে আল্লাহর কাছে বিনম্রভাবে সাহায্য চাইবেন। যে দোয়া করা হয় তা হতে পারে সরাসরি আপনার হৃদয় থেকে আসা প্রার্থনা। তবে, নিচের হাদিসে বর্ণিত দোয়াটিও পড়া যায়:
আরবি দোয়া: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ، يَا مُحَمَّدُ إِنِّي أَتَوَجَّهُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي لِتُقْضَى لِي، اللَّهُمَّ فَشَفِّعْهُ فِيَّ.
বাংলা অনুবাদ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর ওসীলায় প্রার্থনা করছি। হে মুহাম্মাদ (সা.) আমি আপনার মাধ্যমে আমার প্রয়োজন পূরণ করতে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমার এই প্রার্থনায় আপনার নবীকে সুপারিশকারী করুন।”
সালাতুল হাজাতের উপকারিতা
১. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: সালাতুল হাজাত একজন মুমিনের মধ্যে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে।
২. মনের শান্তি: এই নামাজের মাধ্যমে মনের মধ্যে জমে থাকা উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা দূর হয়।
৩. আল্লাহর সাহায্য লাভ: আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল রেখে সালাতুল হাজাত আদায় করলে মুমিন আশা করতে পারে যে তার সমস্যার সমাধান আল্লাহ প্রদত্ত হবে।
৪. পাপ থেকে মুক্তি: সালাতুল হাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চেয়ে জীবনকে পাপমুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
সালাতুল হাজাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ককে মজবুত করে তোলে। যেকোনো বিপদে, সংকটে বা বিশেষ প্রয়োজন মেটাতে এই নামাজ আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি উত্তম মাধ্যম। একজন মুমিনের উচিত তার জীবনের প্রতিটি সমস্যায় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং সালাতুল হাজাতের মাধ্যমে তাঁর রহমত প্রার্থনা করা।