আরজি করের ধর্ষিতা ও মৃতা তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মাকে নিয়ে বিধানসভায় পৌঁছলেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা।
এদিন বেলা ১২টা নাগাদ সজলের সঙ্গে দু’টি গাড়িতে করে বিধানসভায় এসে পৌঁছন তাঁরা। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার ঘরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন দু’জনেই। শুভেন্দু ছাড়াও সেখানে বিজেপির অন্য বিধায়করাও ছিলেন। নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘আমার পাশে সবাই দাঁড়াচ্ছে, আগামী দিনে আপনাদেরও আমার পাশে চাই। আমার মেয়েটা কী এমন অপরাধ করল, যে তাকে এমন নির্মম ভাবে মারা হল?’’ এ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্যাতিতার মা। মহিলারা কি আজও কাজের জায়গায় সুরক্ষিত? বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এই প্রশ্নও তুলেছেন নির্যাতিতার মা। তাঁর কথায়, ‘‘আজও জানতে পারলাম না, সেই রাতে আমার মেয়ের সঙ্গে কী ঘটেছিল।’’ কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্যাতিতার বাবাও। তাঁর চোখ মুছিয়ে দিতে দেখা যায় বিরোধী দলনেতাকে। নির্যাতিতার বাবার কথা শুনে কেঁদে ফেলেন বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউরিও।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আরজি করে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল। এই নিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও তা অনেকটাই স্তিমিত। আমরা অঙ্গীকার করছি বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘আমার মনে হয় পথে থেকে বিচার আদায় করতে হবে।’ কথা বলাকালীন নির্যাতিতার বাবার চোখের জল মুছিয়ে দেন শুভেন্দু। আগামী ৯ ডিসেম্বর আরজি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে রাজভবনের বাইরে ধর্না দেবে বিজেপির পরিষদীয় দল।
প্রশ্ন, আরজি কর আন্দোলনের ব্যাটন কি তবে বামপন্থী মনোভাবাপন্ন লোকজনের হাত থেকে ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে বিজেপির হাতে? আন্দোলনকে ‘হাইজ্যাক’ করছে বিজেপি? আরজি করের আন্দোলনে ‘দখল’ নিয়েছে বামেরা, প্রথম থেকেই এই দাবি করে এসেছে বিরোধীরা। গত ৯ অগস্ট আরজি করে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, কলতান দাশগুপ্তদের নেতৃত্বে নির্যাতিতার দেহ আটকানোর চেষ্টা, ধর্মতলায় অনশন মঞ্চের আশেপাশে বাম মনোভাবাপন্নদের সক্রিয়তা, সেই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু আরজি করের নির্যাতিতার বাবার শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর রাজনৈতিক মহলেরই একাংশের প্রশ্ন,বামেদের বদলে কি আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মা সুবিচারের আশায় গেরুয়া শিবিরকে চাইছেন?
উল্লেখ্য, উপনির্বাচনের আগে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন রাজ্যে এসেছিলেন সেই সময় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলেন আরজি করের নির্যাতিতার বাবা। যদিও সেই সময় অমিত শাহ তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়নি। গত ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে চারতলার সেমিনার হল থেকে চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘটনায় উত্তাল হয় গোটা রাজ্য। এমনকি প্রতিবাদের আঁচ রাজ্য থেকে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছয়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে নির্যাতিতার জন্য বিচারের দাবিতে পথে নামেন সাধারণ মানুষ। চিকিৎসকেরা আন্দোলনে নামেন। চলে অনশন এবং কর্মবিরতিও। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া চলছে।