সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, বিচার বিভাগের কাজ হল ‘আইন যাচাই করা’। বিচার বিভাগ সংসদে বা রাজ্য বিধানসভায় বিরোধীদের ভূমিকা পালন করবে, এটা ভাবা ঠিক নয়। তাঁর এই মন্তব্যের জোরালো জবাব দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি জানালেন, বিরোধীদের কাজ নয়, বিচারপতিরা তাঁদের নিজেদের কাজটুকু করবেন, এটাই আশা করে বিরোধী পক্ষ। দেশের আইন ও সংবিধানকে সমুন্নত রাখাই তাঁদের কাজ। কিন্তু, ‘সঙ্ঘী বিচারক’রা সেটা করছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে এক্সে মহুয়া লেখেন, ‘না, প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় – আপনি বিরোধীদের কাজ করবেন তা আমরা আশা করি না। আমরা আশা করি আপনারা আপনাদের কাজ করবেন এবং আমাদের সংবিধান ও আইনগুলিকে সমুন্নত রাখবেন। আশা করি, প্রত্যেক সঙ্ঘী বিচারক উপাসনালয় আইন, ১৯৯১-কে ছুঁড়ে ফেলে প্রতিটি মসজিদে খোঁড়াখুঁড়ি করার অনুমতি দেবেন না। এটার জন্য লজ্জা হওয়া উচিত!’
সম্প্রতি, উত্তর প্রদেশের সম্ভলে এক মুঘল আমলের মসজিদে সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই হিংসায় প্রাণ যায় ৫ জনের। এই হিংসার জন্য সরাসরি প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় দায়ী করেছেন আইন মহলের একাংশ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে কোনও মন্দির-মসজিদ বা গির্জার চরিত্র পাল্টানো যাবে না। ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার সময় যেখানে যা ছিল, তেমনটাই রাখতে হবে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখতে তৈরি আইনে শুধুমাত্র অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদকে এই আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু কাশী-মথুরায় অযোধ্যা ঘটনার পুনরাবৃত্তির রাস্তা আইনত বন্ধ ছিল। অর্থাৎ, স্বাধীনতার আগে কোনও মন্দির ভেঙে মসজিদ হয়ে থাকলেও এখন যেখানে মসজিদ রয়েছে, সেখানে মসজিদই থাকবে। এই নীতি মেনে চললে, কোনও মসজিদ আগে মন্দির ছিল বলে দাবি উঠলেও সেখানে আর সমীক্ষার প্রশ্নই ওঠে না।
সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির রায় দিলেও এই আইনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। আইন পাশের সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এস বি চৌহান লোকসভায় যে ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্বের কথা বলেছিলেন, তা-ও সেই রায়ে লেখা হয়েছিল। বিচারপতি চন্দ্রচূড় সেই বেঞ্চের অংশ ছিলেন। অথচ পরে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট জ্ঞানবাপী মসজিদে সমীক্ষার নির্দেশ দিলে প্রধান বিচারপতি হিসেবে চন্দ্রচূড় তাতে স্থগিতাদেশ দেননি। এমনকি জ্ঞানবাপী মসজিদের মধ্যে পুজোর নির্দেশেও তিনি ছাড়পত্র দিয়েছিলেন। সেখানেও তিনি মানুষের আস্থার যুক্তি দিয়েছিলেন।’’
আইনজীবী আশিস গয়াল এক্স হ্যান্ডলে সরাসরিই অভিযোগ করেন, ‘‘জ্ঞানবাপী নিয়ে ওঁর অবস্থানই সম্ভলে পাঁচ জনের প্রাণ নিল। এটা অন্য ভাবে আর দেখা যায় না। উনি জানতেন এটা হবে।’’ প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করে বাম নেত্রী সুভাষিণী আলি এক্স-এ লেখেন, “চন্দ্রচূড়ের উত্তরাধিকার: জ্ঞানবাপী, মথুরা ঈদগাহ, এখন সম্ভল মসজিদ…পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারালেন পাঁচ যুবক। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কি শুনছেন? তিনি কি এসব নিয়ে চিন্তা করেন?” স্পষ্টতই, এই সাম্প্রতিক ঘটনাবলীগুলিকে সামনে রেখেই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিকে কড়া ভাষায় তোপ দাগলেন তৃণমূল সাংসদ।