দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্য বই থেকে বাতিল করা হল ২০০২ সালের গুজরাট হিংসার অধ্যায়। অধ্যায়টিতে লেখা ছিল, “গুজরাট হিংসা দেখিয়েছিল যে প্রশাসনও সাম্প্রদায়িক উসকানি দিতে পারে। রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করার ফল যে কী বিপজ্জনক হতে পারে, আমাদের সে বিষয়ে সতর্ক করেছিল গুজরাট। গণতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে যা সর্বনেশে।”
বাদ পড়ল ইন্দিরা গান্ধীর আমলে দেশে জারি করা জরুরি অবস্থার কথাও। একই সূত্রে নকশাল আন্দোলন এবং আরও একাধিক রাজনৈতিক আন্দোলনের কথাও বাদ পড়েছে নয়া সিলেবাসে। ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতে রাজনীতি’ শীর্ষক অধ্যায়ে এতদিন পড়ানো হত এই বিষয়গুলি। এখানেই শেষ নয় অবশ্য। পরিবর্তনের আওতা থেকে বাদ যায়নি মধ্যযুগও। দ্বাদশ শ্রেণির পাঠক্রম থেকে মুঘল আমলের দরবার ও বিচারসভার প্রসঙ্গ এবং একাদশের পাঠক্রম থেকে এশিয়া-আফ্রিকায় মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তারের অধ্যায় বাদ পড়েছে নতুন সিলেবাসে। নয়া শিক্ষানীতি মোতাবেক ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সিলেবাসে এই পরিবর্তনগুলি আনা হয়েছে, এই মর্মে সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ওরফে NCERT।
আরও পড়ুন: WB HS Result 2022: ৫০০-তে ৪৯৮ পেয়ে প্রথম দিনহাটার অদিশা দেবশর্মা, দ্বিতীয় মেদিনীপুরের সায়নদীপ
সিবিএসইর জারি করা নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয় যে, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন, ঠান্ডা লড়াই, মোঘল দরবারের ইতিহাসের মতো বিষয় ফাইনাল পরীক্ষায় আসবে না। এছাড়া কৃষির ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব থেকে শুরু করে আফ্রিকায় মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রসারের মতো বিষয়গুলিও বাদ দেওয়া হয়। পাশাপাশি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে গণতন্ত্র ও বৈচিত্র্য এবং দশম শ্রেণির সাহিত্যে পাকিস্তানি কবি ফৈজ আহমেদ ফৈজের দুটি কবিতার অনুবাদ বাদ দেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়গুলি বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের তরফে বলা হয়েছে, এই বিষয়গুলির কিছু অপ্রাসঙ্গিক আবার কিছু বিষয় অন্যান্য শ্রেণিতে পড়ানো হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্য়েই। উল্লেখ্য, সিবিএসই স্কুলগুলি বাদেও দেশের বেশ কিছু রাজ্য বোর্ডও এনসিইআরটির বই পড়ায়।
এই প্রথম নয়, বরং ইদানীং কালে বারে বারেই কোপ পড়েছে স্কুল-কলেজের সিলেবাসে। কখনও উত্তরপ্রদেশের পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা প্রবন্ধ, কখনও দিল্লি ইউনিভার্সিটির ইংরেজি কোর্স থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে মহাশ্বেতা দেবীর লেখা দলিত মহিলার কাহিনি, কখনও আবার খোদ দলিত কবি-সাহিত্যিকদের লেখাই বাদ পড়েছে পাঠক্রম থেকে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দিক যখন বারেবারেই ধর্মীয় পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে, সেই সময়ে কেন্দ্রীয় দপ্তরের তরফে এই বিশেষ অধ্যায়টি পাঠক্রম থেকে বাদ দেওয়াকে সহজভাবে নিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এই পরিবর্তনগুলি শিক্ষায় গৈরিকীকরণের চেষ্টাকেই চিনিয়ে দিচ্ছে বলে অভিমত শিক্ষা মহলে।
আরও পড়ুন: JEE: রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফলপ্রকাশ, প্রথম ও দ্বিতীয় দু’জনেই হিমাংশু শেখর, ব়্যাংক পেয়েছে 98.5%