তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্যে এক শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্য সরকারের সব চাকরিতে এই সংরক্ষণ রাখতে হবে বলে বলা হয়েছে ওই রায়ে। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এই রায়ের ফলে এই প্রথম বাংলায় সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায় কার্যকরী করা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার চাকরিপ্রার্থী তৃতীয় লিঙ্গের এক ব্যক্তির মামলায় এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপও করতে বলা হয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। পাশাপাশি, বিচারপতি মান্থা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকেও নির্দেশ দিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে পদ তৈরি করে ইন্টারভিউয়ে ডাকতে হবে ওই মামলাকারীকে।
মেদিনীপুর নিবাসী ছেলেটি একসময় আচমকাই নিজেকে মেয়ে মনে করতে শুরু করেন। এই পরিবর্তনের জেরে পরিবার এবং প্রতিবেশীদের থেকে জোটে লাঞ্ছনা এবং গঞ্জনা। শেষমেশ বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এই পরিস্থিতির মধ্যেও অবশ্য পড়াশোনা বন্ধ করেননি। স্নাতক, ডিএলএড পাশ করেন তিনি। বেলঘরিয়ায় থাকতে শুরু করেন। তবে একটা সময় টাকার সংকট চরমে ওঠে। পেট চালাতে সিগন্যালে ভিক্ষাবৃত্তিও করেছেন তিনি।
এর মধ্যেই ২০১৪ এবং ২০২২ সালের টেট পরীক্ষায় পাশ করেন। হাই কোর্টে তাঁর আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁর মক্কেলকে ইন্টারভিউতেও ডাকা হয়েছিল। তবে সেখান থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। চাকরি পাওয়া তো দূর, উল্টে তাঁকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করা হতো। এরপরেই মামলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এবার সেই মামলাতেই সংরক্ষণের নির্দেশ দিলেন জাস্টিস মান্থা।
তবে এই রায় নতুন নয়। সেই ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের অধিকারের পক্ষে নালসা (ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি) রায় দিয়েছিল, যাতে চাকরিতে সংরক্ষণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একমাত্র তামিলনাড়ু ছাড়া আর কোনও রাজ্যে কার্যক্ষেত্রে তার প্রয়োগ ঘটেনি। এবার কলকাতা হাইকোর্টের এই সাম্প্রতিক রায়ের ফলে পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর হতে পারে এই সংরক্ষণ।