গানে গানে শোষণ-বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরেছেন। স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা নানা আন্দোলন সংগ্রামে গণ-মানুষের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন। অর্ধ শতাব্দিরও বেশি লড়াই করেছেন ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে। এজন্য মৌলবাদীদের দ্বারা নানা লাঞ্ছনারও শিকার হয়েছিলেন তিনি। ভাষার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে পথে পথে গান গেয়ে গণজাগরণ সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। পেয়েছেন একুশে পদকও।
২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সুরোলোকে চলে যান লোকসঙ্গীতের সম্রাট। প্রয়াত হন বাউল শাহ করিম। গতকাল তাঁর ১৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হল। এই মহান শিল্পী আজও শায়িত আছেন তাঁর গ্রামে কালনা নদীর তীরে। পাশেই কবরে শায়িত আছেন তাঁর স্ত্রীও।
আরও পড়ুন: Boudi Canteen Trailer: শুভশ্রী আসছেন ‘ক্যান্টিন’ সামলাতে, খাবার চেখে দেখবেন নাকি!
ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে। তিনি তার গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ এর দর্শন থেকে।
আব্দুল করিম এ পর্যন্ত প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। বাউল সাধক শাহ আবদুল জীবনের একটি বড় অংশ লড়াই করেছেন দরিদ্রতার সাথে।
তাঁর লেখা কয়েকটি জনপ্রিয় গান হল – আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, আর কিছু চাই না মনে গান ছাড়া, তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো, কেমনে চিনিব তোমারে (মুর্শিদ ধন হে), আমি ফুল বন্ধু ফুলের ভ্রমরা, আমি ফুল- বন্ধু ফুলের ভ্রমরা, গাড়ি চলে না চলে না ইত্যাদি।
২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম সিলেটের একটি ক্লিনিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যায় বাউল সম্রাটের স্মৃতি জাদুঘরের ভবন ও সংগ্রহশালার বিভিন্ন উপকরণের ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরবর্তী নানা কারণে বাউল সম্রাটের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার গ্রামের বাড়িতে তেমন কোনো আয়োজন নেই। পারিবারিক আয়োজন ও স্থানীয় শিল্পীদের ঘরোয়া আয়োজনে পালিত হচ্ছে বাউল সম্রাটের প্রয়াণ দিবস।