‘মানুষের স্বার্থ আগে দেখবে রাজ্য সরকার, তাতে মেলা বন্ধ করতেও পিছপা হবে না সরকার…’ বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ নিয়ে এক মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল এমন কথাই জানালেন। আর তাতেই গঙ্গাসাগর মেলার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে।
রাজ্যে করোনা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে এ বছরে গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ করা উচিত এই আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন চিকিৎসক অভিনন্দন মণ্ডল। বুধবার সেই মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি কেসাং ডোমা ভুটিয়ার ডিভিশন বেঞ্চে।
মামলাকারীর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী আদালতে জানান, গঙ্গাসাগর মেলায় প্রতি বছর ১৮-২০ লক্ষ মানুষ আসেন। গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে ৮ লক্ষ পুণ্যার্থী এসেছিলেন। তিনি আরও জানান, রাজ্য সরকার সম্প্রতি নির্দেশিকা জারি করেছে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ৫০ জনের বেশি লোক জমায়েত করতে পারবেন না। গঙ্গাসাগর মেলাও তো ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তা হলে এই মেলায় অনুমতি দেওয়া হচ্ছে কী ভাবে। বিশেষ করে গত কয়েক দিনে যে হারে কোভিড সংক্রমণ বেড়েছে রাজ্যে, এমন পরিস্থিতিতে মেলা করা কি উচিত।
মেলা নিয়ে হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের আইনজীবীর সওয়াল, ”এবার গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কমেছে। ওমিক্রন বেশি সংক্রামক হলেও, গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কমেছে”। মামলাকরীদের পক্ষ থেকে পালটা বলা হয়েছে, ”ডেল্টা কি চলে গেছে? ৪০০-র কাছে চিকিৎসক আক্রান্ত, এভাবে হলে তো ভেঙে পড়বে পরিষেবা। গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে হাইকোর্টে আশঙ্কা ওয়েস্ট বেঙ্গল চিকিৎসক ফোরামের। পুণ্যার্থীদের অধিকাংশই কলকাতা হয়ে সাগরে যান। ফলে কলকাতার অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।”
এ প্রসঙ্গে মামলাকারীর আইনজীবী চারধাম যাত্রা নিয়ে উত্তরাখণ্ড হাই কোর্টের রায় তুলে ধরেন। কোভিড পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে গত বছরের জুনে চারধাম যাত্রা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল উত্তরাখণ্ড হাই কোর্ট।
তখন রাজ্যের এজি-কে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে কী চিন্তাভাবনা করছে রাজ্য। সেই প্রশ্নের জবাবে এজি জানান, মেলার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা সবিস্তারে আদালতে জানাব রাজ্য। এর পরই প্রধান বিচারপতি এজি-কে জানান, শুধু ব্যবস্থাপনা নয়, মেলা বন্ধ করা হবে কি না সে বিষয়েও জানাতে হবে। মেলার এলাকা কত বড় এ প্রসঙ্গে এজি-কে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিতে পারেননি। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, বৃহত্তর জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখে মেলা বন্ধ করা যায় কিনা বিবেচনা করুক রাজ্য।
আগামীকাল দুপুর দুটোর মধ্যে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ। কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে, ”গঙ্গাসাগর মেলায় যাঁরা যাবেন, কিংবা যাঁরা যাবেন না, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় প্রত্যেকের কথা মাথায় রাখতে হবে, আশা করি বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার।”