সোমবার প্রয়াত হয়েছেন বিশ্ব সিনেমার ‘স্বপ্নসুন্দরী’! অভিনয়ের পাশাপাশি পর্দায় যাঁর আবির্ভাবটুকুও ছিল অনেকখানি। ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে তাঁর যৌন আবেদন মুগ্ধ ছিল গোটা বিশ্ব। তৎকালীন বিনোদন পত্রিকাগুলি জিনাকে ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী’ ঘোষণা করেছিল।
জিনার প্রপৌত্র ফ্রাঞ্চেস্কো লোলোব্রিজিদা, যিনি বর্তমানে ইটালির (Italy) কৃষিমন্ত্রী, তিনিই প্রথম টুইট করে জিনার মৃত্যুসংবাদ জানান। যা শুনে শোকস্তব্ধ হয় হলিউড (Hollywood)। উল্লেখ্য, চলচ্চিত্র জগতে জিনার উত্থান এবং আচমকা ফিল্মি দুনিয়া থেকে প্রস্থান, দুই ছিল চমকপ্রদ। ১৯২৭ সালে পূর্ব রোমে জন্ম জিনার। বাবা ছিলেন সাধারণ কাঠমিস্ত্রি। বয়সসন্ধী থেকেই শারীরিক সৌন্দর্যে সকলকে মুগ্ধ করেন জিনা। পরে সেই মোহিনী রূপই গোটা বিশ্বকে পর্দার কাছে টেনে আনে। বলা বাহুল্য, তাঁর ভক্তদের অধিকাংশ ছিলেন পুরুষ।
হলিউডের স্বর্ণযুগেই সুপারস্টারের তকমা পেয়েছিলেন জিনা। অভিনয় দক্ষতা, রূপ এবং নায়িকাসুলভ আচরণে কোটি কোটি হৃদয় হরণ করেছিলেন লোলো। বোল্ড কায়দায় হয়ে উঠেছিলেন সেক্স সিম্বল। তবে নিজেকে ‘অভিনেতা’ বলতে পছন্দ করতেন না কখনও। বরং গর্ব করে বলতেন, “আমি নায়িকা।” দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালিয়ান সিনেমায় রেনেসাঁ আসে। সেই সময়েই কেরিয়ার শুরু করেছিলেন জিনা। তাঁর প্রথম ছবির নাম Lucia di Lammermoor। ১৯৪৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল সিনেমাটি। ওই বছরেই দ্য ওয়াইন অফ লাভ এবং ব্ল্যাক ইগল নামের আরও দু’টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন নায়িকা। এরপর একের পর এক ছবিতে কাজ করেছেন।
তাঁর প্রথম ইংরেজি ছবি ছিল ১৯৫৩ সালে জন হুস্টনের পরিচালনায় ‘বিট দ্য ডেভিল’ (Beat The Devil)। ১৯৬১ সালে রোম্যান্টিক কমেডি ‘কাম সেপ্টেম্বর’-এ (Come September) রক হাডসনের বিপরীতে তাঁর অভিনয় গোটা বিশ্বেরই মন জয় করেছিল। দক্ষ নৃত্যশিল্পীও ছিলেন জিনা। ভক্তদের একাংশের বক্তব্য, রূপ আর যৌন আবেদনের ঝলকানিতে তাঁর অভিনয় প্রতিভা চাপা পড়ে যায়। ১৯৬১ সালে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার পান জিনা লোলোব্রিজিদা । ১৯৯৩ সালে ফরাসি সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান লিজিয়ঁ দ্য ন্যর (Legion of Honour) লাভ করেন।
আরও পড়ুন: Golden Globes 2023: সেরা গান ‘নাটু নাটু’, RRR-এর হাত ধরে গোল্ডেন গ্লোব এল দেশে
চিত্রগ্রাহক হিসাবেও দক্ষতা ছিল জিনার। অভিনেত্রী এবং নৃত্যশিল্পী হিসাবে কেরিয়ার যখন মধ্যগগনে, তিনি চিত্রসাংবাদিক হিসাবে কাজ শুরু করেন। খ্যাতি আসে তাতেও।
জিনার সঙ্গে ভারতের যোগও রয়েছে। সাতের দশকে মুম্বইতে এসেছিলেন তিনি। ‘শালিমার’ ছবির প্রচারের জন্য ভারতে তাঁকে আনা হয়েছিল। ধর্মেন্দ্র, জিনাত আমনদের মতো ভারতীয় তারকাদের কাজ করার কথা ছিল তাঁর। তবে শেষ পর্যন্ত কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ছবিটিতে জিনা কাজ করেননি। ইটালির সংবাদপত্র ‘কোরিয়ার দেলা সেরা’য় একটি সাক্ষাৎকারে জিনা জানিয়েছিলেন, মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ এবং কর্মপদ্ধতির দ্বারা তিনি অনুপ্রাণিত। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে দাবি করেন কেউ কেউ।
তবে শেষজীবনটা আইনি লড়াইয়ের মধ্যেই কেটেছে জিনার। তাঁর উপার্জিত সম্পত্তির দায়িত্ব সামলানোর মতো মানসিক অবস্থা রয়েছে কিনা সেটা নিয়েই আইনি বিবাদ চলছিল। মাঝেমধ্যে রোমের কোর্টে দেখা যেত তাঁকে।
আরও পড়ুন: Sushant Singh Rajput: সুশান্তের কাছে চলে গেল তাঁর প্রিয়জন, শোকের ছায়া পরিবারে