হিলতোলা জুতো ছেড়ে পায়ে পরেছেন কম্ব্যাট শ্যু। আঁটো করে বাঁধা চুল। চোখে চশমা। পরনে লেদার জ্যাকেট। আর হাতে মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র কালাশনিকভ। নিজের মাতৃভূমিকে রুশ সেনাদের হাত থেকে বাঁচাতে বন্দুক হাতে রাস্তায় নেমে পড়েছেন ইউক্রেন সুন্দরী আনাস্তাসিয়া। সোশ্যাল মিডিয়াতেই সেই ছবি নিজেই শেয়ার করেছেন আন্তর্জাতিক ময়দানে খ্যাতিসম্পন্ন এই মডেল।
রুশ আক্রমণে বিপন্ন দেশ। প্রাণ বাঁচাতে বাঙ্কারে আশ্রয় নিলেও দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে। শত্রু দেশকে আর ভয় নয়! তাই ইউক্রেন সরকারের তরফে জনসাধারণের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। সেই তালিকাতেই নাম লেখালেন প্রাক্তন ‘মিস ইউক্রেন’ আনাস্তাসিয়া লিনা।
ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেই বেশি স্বচ্ছন্দ আনাস্তাসিয়া।তবে আজকাল শ্যুটিং রেঞ্জে বার বার লক্ষ্যভেদ করছেন। মাতৃভূমির স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখতে নিজে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে নেটমাধ্যমকে হাতিয়ার করে দেশবাসীকেও উদ্বুদ্ধ করছেন আনাসতাসিয়া। বৃহস্পতিবার ইউক্রেন আক্রমণের পর পুতিনবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নেটমাধ্যমে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ভক্তদের কাছে তাঁর আবেদন, ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরব হোন।’ রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন আনাসতাসিয়া। শনিবার ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে তাঁর স্পষ্ট হুমকি— ‘হানাদারির জন্য যাঁরা ইউক্রেনের সীমান্ত পার করেছেন, সকলেই মারা পড়বেন!’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জোলেনস্কির সমর্থনেও মুখ খুলেছেন এই প্রাক্তন মডেল তথা অভিনেতা। ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটছেন জেলেনস্কি— এমন একটি ছবিও দেখা গিয়েছে আনাস্তাসিয়া পোস্টে। জেলেনস্কিকে আদর্শ নেতা বলেই মনে করেন আনাস্তাসিয়া।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে আনাস্তাসিয়ার অভিনয়ের হাতেখড়ি। অভিনয়ের পাশাপাশি টেলিভিশনে সঞ্চালনা বা মডেলিংও করেছেন। ২০১৫ সালে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় সেরার শিরোপা কেড়ে নেন আনাস্তাসিয়া। সে বছর ‘মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল’ নামে ওই প্রতিযোগিতায় ‘মিস ইউক্রেন’-এর খেতাবজয়।পেশাদারি জীবন শুরুর আগে কিভের স্লাভিসটিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে স্নাতক হন। এর পর জনসংযোগ ম্যানেজার চাকরি নিয়ে তুরস্কের ইস্তানবুল, আঙ্কারা এবং বোদরামে ঘুরেছেন। পাঁচটি ভাষায় দক্ষ আনাস্তাসিয়া কিছুকাল অনুবাদকের চাকরিও করেছেন।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে আনাস্তাসিয়ার মতো মহিলার সংখ্যা নেহাত কম নয়। বস্তুত, বিশ্বের মধ্যে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতেই মহিলা সেনানির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি— ৩৬ হাজার। জেলেনস্কির সেনাবাহিনীর এই মহিলা সেনানিরা যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকে খতম করার কাজে অত্যন্ত দক্ষ।