মেহেনাজ পারভিন
সোশ্যাল মিডিয়ায় হঠাৎ করেই ভাইরাল ছোটবেলায় শোনা ‘দোল দোল দুলুনি’। যদিও এপার বাংলার বহু ছোটদের কবিতার বইয়ে এটির একটি বিকৃত রূপের দেখা মেলে। আর লেখকের নাম হিসাবে লেখা হয় ‘সংগৃহিত’। আসলে বহুল প্রচলিত এই লোকসংগীতের লেখক হলেন আবদুল লতিফ।
মূলত বাংলাদেশের দুটি গানের অনুষ্ঠান এই গানকে আরও একবার আলোচনার জায়গায় নিয়ে ESECH। একটি অনুষ্ঠান হল ‘কোক ষ্টুডিও বাংলা’। সেখানে হাজং ভাষার একটি গানের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে বহুল পরিচিত লোকগান ‘দোল দোল দুলুনি’। গানটি ইউ টিউবে প্রকাশ হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি। শিরোনাম ‘নাসেক নাসেক’। হাজং ভাষার গানটি গেয়েছেন অনিমেষ রায়। পাশাপাশি এটির কথা-সুরও তার। অন্যদিকে লোকগানটি গেয়েছেন শক্তিশালী কণ্ঠশিল্পী পান্থ কানাই।ফেসবুকের সার্চ ইঞ্জিনে এই নামটি এখন বাংলাদেশের ‘পপুলার’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। মূলত বাংলার বারো মাসে তেরো পার্বণের চেতনাকে ধারণ করে এই গান তৈরি করা হয়েছে। সেই আনন্দ-উৎসবই যেন ছড়িয়ে গেছে সবার মাঝে। মাত্র ৫দিনেই গানটির ভিউ ছাড়িয়েছে ২৬লাখ। রয়েছে ৯২ হাজারের বেশি লাইক।’
অন্যটি হল ‘IPDC আমাদের গান’, সেখানে এই গানটি গেয়েছেন ফজলুর রহমান বাবু। ২৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেয়েছে গানটি। আর একদিনেই গানটির ভিউ প্রায় ৫২ হাজার।
আরও পড়ুন: ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’,‘মঙ্গল দীপ জ্বেলে’ ‘এ আমার গুরুদক্ষিণা’…বাপ্পি লাহিড়ীর সেরা ১০ বাংলা গান
এবার জেনে নিন নতুন করেই ভাইরাল হওয়া গানটির লেখক সম্পর্কে।
আবদুল লতিফ (১৯২৫-২০০৫) একজন খ্যাতনামা বাংলাদেশি গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী। উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে কলকাতায় যান। কংগ্রেস সাহিত্য সংঘে তিনি ১৬ বছর বয়স থেকে গান গাইতে শুরু করেন। ১৯৪৮ সালের জুলাই মাসে তিনি ঢাকায় আসেন এবং পরের মাসে রেডিও পাকিস্তানের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। তিনি নিয়মিত বিভিন্ন মঞ্চ অনুষ্ঠানে গান গাইতেন এবং ভাষা আন্দোলনে অণুপ্রেরণা যোগাতেন।
১৯৫২ সালে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখা আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটিতে তিনি সুরারোপ করেন। পরবর্তীকালে গানটিতে সুরারোপ করেছিলেন আলতাফ মাহমুদ। তিনি তাঁর জীবনে অসংখ্য গানে সুরারোপ করেছেন এবং কন্ঠ দিয়েছেন। পরবর্তীকালে তিনি নিজেও ভাষা আন্দোলনের উপর অসংখ্য গান রচনা করেছেন, তন্মধ্যে ‘ওরা আমার মুখের কথা কাইড়া নিতে চায়’, ‘আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’ ইত্যাদি বিশেষ জনপ্রিয় ।
১৯৯৭ সালে তাঁকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের সঙ্গীতে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০০২ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার হিসাবে পরিচিত স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয় তাঁকে। ২০০৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন।
আরও পড়ুন: হিজাবই আমার পরিচয়, র্যাপ গানে দুনিয়া মাতাচ্ছেন পাকিস্তানের ইভা বি