Obstructive sleep apnea - Symptoms and causes

Bappi Lahiri: অবসট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় মারা গেলেন বাপ্পি, কী এই রোগ

আমরা ঘুমিয়ে গেলেও আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রমাগত নিয়মতান্ত্রিকভাবেই চলতে থাকে। কারণ আমাদের মস্তিষ্কের রেসপিরেটারি সেন্টার সবসময় কাজ করতে থাকে। তবে ঘুমের মাঝে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো জটিল সমস্যা কারও কারও দেখা যায়। এটিকে স্লিপ অ্যাপনিয়া বলা হয়।

একেই বলে স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নিদ্রাকালীন শ্বাসরোগ। এই রোগ আবার দুই ধরনের। যেমন—

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ) : এতে রোগীর গলবিলে শ্বাস বন্ধ হয়ে নাক ডাকা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। সারা বিশ্বে সাধারণত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে দুই থেকে চারজন ওএসএ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগে থাকে। বাংলাদেশের শহুরে জনসংখ্যার এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ ও নারীদের ৪.৪৯ ও ২.১৪ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত।

সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া (সিএসএ) : এটি সাধারণত ব্রেন বা মস্তিষ্কের কারণে হয়। এর কারণ সাধারণত হার্ট ফেইলিওর, লিভার ফেইলিওর। ফলে রোগীর শ্বাসকেন্দ্রে অর্থাৎ মস্তিষ্কে যে রেসপিরেটরি সেন্টার থাকে, সেখানেই শ্বাসের প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে।

কারণ

দৈহিক স্থ্থূলতা : যাদের ওজন বেশি, তাদের স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

মুখ ও করোটির গঠনগত ত্রুটি : কিছু মানুষের বিশেষত এশিয়া অঞ্চলের মানুষের মধ্যে দেখা যায়, নিচের চোয়াল ছোট বা পেছনের দিকে চাপা, ফলে মুখগহ্বর সংকীর্ণ হয়ে যায়। এ ধরনের রোগীদের দৈহিক স্থ্থূলতা না থাকলেও স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে।

বয়স : ৩০ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রবণতা বেশি। তবে শিশুদের, বিশেষ করে যাদের টনসিল অথবা অ্যাডিনয়েড আকারে বড় হয়, তাদেরও হতে পারে।

লিঙ্গ : সাধারণত নারীদের চেয়ে পুরুষের বেশি হয়। নারীদের তুলনায় পুরুষদের স্লিপ অ্যাপনিয়ার হার দুই গুণ বেশি। তবে রজোবন্ধ বা মেনোপজের পর পুরুষ ও নারীরা সমানভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয়। গর্ভবতী নারীরাও এই রোগে বেশি ভোগেন।

ধূমপান : ধূমপানের ফলেও স্লিপ অ্যাপনিয়া হয়, যা প্রতিরোধযোগ্য।

জেনেটিক বা বংশগত : হার্ট ফেইলিওর, অ্যাজমা, সিওপিডি, কিডনি ফেইলিওর, স্ট্রোক, হাইপোথাইরয়েডিজম ইত্যাদি এ রোগ বাড়িয়ে দেয়।

লক্ষণ

নাক ডাকা : স্লিপ অ্যাপনিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ নাক ডাকা। ৯৫ শতাংশ ওএসএ রোগী প্রায় প্রতিদিন ঘুমের ঘোরে দিনে অথবা রাতে নাক ডাকেন। রাত যত বাড়তে থাকে, নাক ডাকার তীব্রতা তত বাড়তে থাকে। কখনো তিনি টের পান, তবে বেশির ভাগ সময়ই তাঁর স্ত্রী বা সঙ্গীরা এই নাক ডাকার অভিযোগ করেন। অনেকের ধারণা, নাক ডাকা হলো একটি গভীর বা প্রশান্তির ঘুম। প্রকৃতপক্ষে সে স্লিপ অ্যাপনিয়া নামের একটি ভয়াবহ কিন্তু উপেক্ষিত রোগে আক্রান্ত। তবে সব নাক ডাকা রোগীর এই সমস্যা না-ও থাকতে পারে।

শ্বাস বন্ধ হওয়া : নাক ডাকতে ডাকতে অনেকের পুরোপুরি শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় কেউ কেউ মৃত্যুভয়ে ভীত হন। রোগী বিষম খাওয়ার মতো গলার কাছে হাত নিয়ে দেখান, যেন গলায় শ্বাস আটকে মারা যাচ্ছেন।

ঘুম থেকে জেগে ওঠা : শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে আচমকা ঘুম থেকে জেগে উঠে শ্বাস নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন অনেকে।

রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া : ওএসএ রোগীকে একাধিকবার ঘুম ভেঙে প্রস্রাব করতে হয়।

মুখ ও গলা শুকিয়ে যাওয়া : এ জন্য বারবার ঘুম থেকে উঠে পানি খেতে হয়।

সকালে মাথা ব্যথা : ঘুম থেকে উঠলে মাথা ভারী হয়ে থাকে।

হাত-পা ছোড়াছুড়ি করা : স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগী ঘুমের ঘোরে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে, এমনকি স্ত্রী বা সঙ্গীকে হাত-পা দিয়ে আঘাত করে।

ঘুমে অতৃপ্তি : রাতে যত দীর্ঘ সময় ঘুমান না কেন, ঘুমের অতৃপ্তি থেকেই যায়।

তন্দ্রালু ভাব : দিনের বেলা সারাক্ষণ ঘুম ঘুম ভাব লেগেই থাকে। অফিসের মিটিংয়ে বসলে, ড্রাইভিং করতে, নামাজ পড়তে গেলে, খবরের কাগজ পড়তে গেলে ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঘুমের তাড়নায় সব এলোমেলো হয়ে যায়।

অতিরিক্ত সড়ক দুর্ঘটনা : সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীরা যদি গাড়ি চালান, তবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি হয়। এ কারণে উন্নত বিশ্বে যেমন—আমেরিকায় স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয় না। আমাদের দেশের সড়ক দুর্ঘটনা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি; কিন্তু এর কারণ হিসেবে স্লিপ অ্যাপনিয়া কতটা দায়ী তা জানা সম্ভব গবেষণার মাধ্যমেই।

এ ছাড়া স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগের তীব্রতা এবং স্থায়িত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো নানা সমস্যা দেখা দেয়। যেমন—কর্মদক্ষতা কমে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, ছোটখাটো কারণে বাসায় ও কর্মক্ষেত্রে ঝগড়াঝাঁটি লেগে যায়। অনেক ক্ষেত্রে কোন কোন পুরুষ রোগীর যৌনক্ষমতা হ্রাস পায়।

আরও পড়ুন: সর্দি, কাশিতে কষ্ট পাচ্ছেন? দু’দিনে সেরে উঠুন এই ৬টি ঘরোয়া উপায়ে

জটিলতা

স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীরা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মতো শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জটিলতায় ভোগে। রক্তনালিতে প্রদাহজনিত কারণ, অক্সিজেনের স্বল্পতা, কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি, রক্ত চলাচলের তারতম্য, রক্তের জমাট বাঁধা প্রক্রিয়ার তারতম্য ও আরো কিছু কোষ এবং রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি রক্তনালির প্রাচীরে ক্ষত সৃষ্টি করে, যা পরবর্তী সময়ে চর্বি জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। রক্তনালির এই সমস্যার কারণে হৃদ্যন্ত্রে সমস্যা বা করোনারি আর্টারি ডিজিজ ও মস্তিষ্কে স্ট্রোক হয়ে থাকে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, তীব্র স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীরা, যাঁরা চিকিৎসা নেন না, তাঁদের মৃত্যুহার প্রতি আট বছরে ৫ শতাংশ বাড়ে।

হৃদরোগ : উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ফেইলিওর, অনিয়মিত হৃত্স্পন্দন ও করোনারি আর্টারি ডিজিজ—হার্টের এই চারটি রোগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত স্লিপ অ্যাপনিয়া। স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা করালে হাইপারটেনশনের নিয়ন্ত্রণ অনেক ভালো হয়, প্রেসারের ওষুধের পরিমাণ কমে যায়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শুধু ওষুধের মাধ্যমে যাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

করোপালমোনেলি : দীর্ঘদিন স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা করা না হলে ধীরে ধীরে রোগীর পালমোনারি হাইপারটেনশন হয়ে হার্টফেল করতে পারে, যাকে বলে করোপালমোনেলি।

অকস্মাৎ মৃত্যু : অনিয়মিত হৃত্স্পন্দনের কারণে হঠাৎ কারো মৃত্যু হতে পারে।

এ ছাড়া ডায়াবেটিস, দেহের ওজন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি জটিলতা দেখা দেয় স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগীদের।

আরও পড়ুন: Kiss Day 2022: বাড়ে আত্মবিশ্বাস, বার্ন হয় ক্যালরি, জেনে নিন চুমুর উপকারিতা