আমেরিকার সংস্থার তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে মারাত্মক ধস নামল আদানি গ্রুপের (Adani Group) শেয়ারে। যার প্রভাব পড়ল ভারতীয় স্টক মার্কেটে। সাকাল ১০টার মধ্যেই ১ শতাংশের বেশি পড়ে গেল নিফটি। বাজার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আজ আরও পতনের দিকে যাবে বাজার।
বুধবারের হিনডেনবার্ডের রিপোর্টের জেরে ৮৫ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে দেখতে হয় আদানি গ্রুপকে। শুক্রবার বাজার খুলতেই আদানি গ্রুপের বেশিরভাগ স্টক ১৯ শতাংশের নিচে চলে যায়। মূলত, কোম্পানিতে প্রোমোটার বা মালিকের কারসাজির ফলেই স্টকের দাম বাজারে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। অন্য লোকের ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচুর শেয়ার কিনে নিজের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে আদানিরা, এমনই বলছে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। যা এক কথায় বিনিয়োগকারীদের চোখে ধুলো দেওয়ার সমান। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশ্যে আদানি গ্রুপকে স্টকে তছরূপ ও হিসেবে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে। মূলত, আদানির ৫ কোম্পানির নাম রয়েছে এই জালিয়াতির তালিকায়। রক্ষা পেয়েছে আদানি উইলমার ও আদানি পোর্টের মতো কোম্পানি।
আমেরিকার মার্কেট রিসার্চ সংস্থা হিনডেনবার্গের রিপোর্ট বলছে, আদানি গ্রুপের ৫ বড় কোম্পানি শেয়ার বাজার থেকে ‘ডি-লিস্টিং’ বা বাদ পড়তে পারে। মূলত, এই পাঁচ কোম্পানির শেয়ারে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পতন হতে পারে।বর্তমানে লিকুইডিটি ক্রাইসিস বা নগদের অভাবে ধুঁকছে এই কোম্পানিগুলি। যার ফলে বিপুল ঋণের বোঝা মেটাতে অপারগ আগাদি গ্রুপ। সেই কারণেই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে কোম্পানি।
অতীতেও মার্কিন কোম্পানিকে নিয়ে এই ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে হিনডেনবার্গ। দেখা যায়, ৯২ ডলারের সেই শেয়ার ২ ডলারে নেমে আসে। পরবর্তীকালে আমেরিকার বাজার থেকে ডি-লিস্টিং হয়ে যায় সেই কোম্পানি।
এই রিপোর্টে প্রকাশের পরই এবার হিনডেনবার্গের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্তা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে আদানি গোষ্ঠী। একটি প্রেস বিবৃতিতে কোম্পানির লিগাল হেড যতীন জালুনধাওয়ালা জানিয়েছেন, এই রিপোর্টের ভিত্তিতে ভারতীয় শেয়ার বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা একটা চিন্তার বিষয়। ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে কোম্পানি।
এরপর ২৬ জানুয়ারি ফের এক পাল্টা বিবৃতি প্রকাশ করল হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। তাতে তারা লিখেছে, ‘আমাদের রিপোর্ট প্রকাশের পর ৩৬ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। আদানি আমাদের উল্লেখ করা ইস্যুগুলির একটিরও বিষয়ে সঠিক কোনও ব্যাখা দেয়নি। আমাদের রিপোর্টের শেষে, আমরা মোট ৮৮টি সরাসরি প্রশ্ন তুলে ধরেছিলাম। আমাদের বিশ্বাস, তার মাধ্যমেই আমরা সংস্থাকে স্বচ্ছতা দেখানোর একটি সুযোগ দিয়েছিলাম। এখনও পর্যন্ত আদানি তার কোনওটারই জবাব দেয়নি।’
এরপর সংস্থা আরও উল্লেখ করেছে, ‘উল্টে, আশানুরূপভাবেই আদানি হুমকি দিচ্ছে। আজ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি বিবৃতিতে আদানি আমাদের ১০৬ পাতার, ৩২,০০০ শব্দের, ৭২০টি সূত্রের এবং ২ বছর ধরে তৈরি করা রিপোর্টকে বিনা গবেষণায় বলে উল্লেখ করেছে।’ আইনি পদক্ষেপের বার্তার প্রেক্ষিতে হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছে, ‘এই কথা জানিয়ে রাখা ভালো, আমরা এই ধরনের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই। আমরা আমাদের রিপোর্টের বিষয়ে সম্পূর্ণ রূপে আত্মবিশ্বাসী। আমাদের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তাতে লাভ হবে না।’
আরও পড়ুন: Himanta Biswa Sarma: ‘কে শাহরুখ’ থেকে ‘শ্রী শাহরুখ’ , হিমন্তের ডিগবাজিতে হাসছেন বিরোধীরাও, এল সাফাইও