নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী সেনা’ নিয়োগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্রমশই বিক্ষোভ দানা বাঁধছে রাজ্যে রাজ্যে। পরিস্থিতি সামলাতে অগ্নিপথ প্রকল্পে নিয়োজিত ‘অগ্নিবীর’দের চার বছরের মেয়াদ শেষে নতুন করে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্য।
গত ১৪ জুন কেন্দ্রের তরফে অগ্নিপথ মডেলে নিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়। যে মডেলের বিরোধিতায় নেমেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। ক্ষোভের জেরে ট্রাফিকের পাশাপাসি বিহারের বিভিন্ন জায়গায় রেল চলাচল ব্যাহত হয়। বক্সার, বেগুসরাই, ভোজপুর, মুজাফ্ফরপুরে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাটনাগামী পাটুলীপুত্র এক্সপ্রেসে এদিন ঢিল ছোঁড়া হয়েছে। মুজাফ্ফরপুরে বিক্ষোভের জেরে বহু ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
২০১১ আদমসুমারী অনুযায়ী সেনায় ১০ শতাংশ কোটা ছিল বিহার ও ঝাড়খণ্ডের প্রার্থীদের। জানা গিয়েছে প্রতিবাদীদের অনেকেই চাকরি প্রার্থী। তাঁরা গত ২ বছর আগে নিয়োগের জন্য মেডিক্যাল টেস্ট দিয়েছিলেন। তবে লিখিত পরীক্ষা ছিল বাকি। এবার সেই পরীক্ষার্থীদের নিয়োগ নিয়েও কর্তৃপক্ষ কিছু জানাচ্ছে না বলে দাবি সেনায় যোগ দিতে আগ্রহীরা। ‘ভর্তি দো ইয়া অর্থি দো’ (হয় ভর্তি করো নয় মৃত্যু) এমন স্লোগান দিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন প্রতিবাদীরা। এর আগে বিহারের ১৩ টি জোনাল রিক্রুটমেন্ট অফিস থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলত।
রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে বৃহস্পতিবার অগ্নিপথ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে হয়েছে বিক্ষোভ। হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র এবং উত্তরপ্রদেশ থেকেও ক্ষোভের আঁচ মিলেছে। যে রাজ্যগুলির যুবকদের সেনায় যোগদানের হার বেশি, সেখানে আন্দোলনের সুর আরও চড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: নবীর অপমান ফুঁসছে আরবমুলুক , লজ্জায় মাথা হেঁট নয়াদিল্লির, ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, দেশের যুবকদের চাকরির বড় ভরসা হল ভারতীয় সেনা। চাকরিতে স্থায়িত্বের কারণে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণরা সেনার চাকরিকে বেছে নেন। কিন্তু অগ্নিপথ প্রকল্পে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ‘অগ্নিবীর’দের চাকরি পাওয়ার চার বছরের মধ্যেই অবসর নিতে হবে। এককালীন কিছু টাকা মিললেও থাকবে না পেনশনের ব্যবস্থা। সে ক্ষেত্রে তাঁদের আবার নতুন করে চাকরির সন্ধান করতে হবে। অনিশ্চিত হয়ে পড়বে ভবিষ্যৎ।
মোদী সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে সেনার অন্দরে স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা দেবে বলেও প্রাক্তন সেনা আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন। তা ছাড়া চার বছরের কাজের শেষে অবসর নেওয়ার চুক্তিতে নিয়োজিত ‘অগ্নিবীরে’রা কেন সীমান্ত সুরক্ষা বা জঙ্গি দমন অভিযানের সময় জেনেবুঝে ঝুঁকি নেবেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
প্রাক্তন সেনাকর্মীদের সংগঠন এক্স-আর্মি ওয়েলফেয়ার ইউনিয়নের অন্যতম নেতা অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার প্রেমজিৎ সিং ব্রার বলেন, ‘এটা সরকারের খারাপ সিদ্ধান্ত। চার বছরের জন্য সেনার চাকরিতে এমনিতেই হাতেগোনা যুবক যোগ দিতে চাইবে। আর, যাঁরা যোগ দেবেন, তাঁদের নিয়ে বেসরকারি সেনা গড়ে তোলা গ্যাংস্টারদের পক্ষে সহজ হয়ে যাবে। কেউ যদি সীমান্তে মারা যান, সরকার বলছে সেই অগ্নিবীরকে কেবল নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ দেবে। তার পরিবার কোনও পেনশন আর পূর্ণকালীন সুযোগ-সুবিধা পাবে না। এই পরিস্থিতিতে কেন কেউ সীমান্তে গিয়ে শহিদ হতে রাজি হবে?’
আরও পড়ুন: Presidential Election 2022: রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হতে গোপালকৃষ্ণকে প্রস্তাব বিরোধীদের?