Ashwini Vaishnaw: Rail Minister Ashwini Vaishnaw speaks about bullet train in India but nothing about train accidents

Ashwini Vaishnaw: ১৪ দিনে ৮ বার রেল দুর্ঘটনা! সেসব ভুলে সংসদে বুলেট ট্রেনের গুণ গাইলেন রেলমন্ত্রী

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও তাজা। এর মধ্যেই রাঙাপানিতে ফের দুর্ঘটনা। বুধবার ফাঁসিদেওয়ার কাছে একটি মালগাড়ির দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। মঙ্গলবার ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাওড়া থেকে মুম্বইগামী হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেস। বেলাইন হয়ে যায় ১৮টি কামরা।  মৃত্যু হয় দুজনের। গত ৬ সপ্তাহে একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু এবং শতাধিকের জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সমগ্র ঘটনায় রেলের সুরক্ষা নিয়ে বড় প্রশ্নের মুখে রেল কর্তৃপক্ষ।

নথি বলছে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৩৬-টি দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে ট্রেন। মৃত্যু হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশো যাত্রীর। আহতের সংখ্যাও দেড় হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে বড় দুর্ঘটনার সংখ্যা ১৮টি। এমন আবহে বুধবার সংসদে এলেও রেল দুর্ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করলেন না রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। বরং দেশ কত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে তা বোঝাতে টেনে আনলেন বুলেট ট্রেনের প্রসঙ্গ।

বুধবার লোকসভার অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন অশ্বিনী। সেখানেই বুলেট ট্রেনের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। জাপানের সহায়তায় এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ভারতে এসেছে। অধিকাংশ কাজ হয়েও গিয়েছে বলে জানান তিনি। অশ্বিনী বলেন, ‘‘বুলেট ট্রেন একটি অত্যন্ত জটিল এবং প্রযুক্তিনির্ভর প্রকল্প। যাত্রীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে জাপানি রেলওয়ের সাহায্যে এই প্রকল্পের নকশা তৈরি করা হয়েছে। ভারতের পরিবেশ এবং চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে। সমস্ত কাঠামো, রেললাইন, বিদ্যুতের সিগন্যালিং এবং টেলি যোগাযোগের কাজ সম্পন্ন হলে বুলেট ট্রেন চালু করার দিনক্ষণ স্থির করা যাবে।’’

দেশে প্রথম বুলেট ট্রেনটি চলবে মুম্বই থেকে আমদাবাদ পর্যন্ত। এই ৫০৮ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে এই মুহূর্তে ৩২০ কিলোমিটারে কাজ চলছে বলে জানান রেলমন্ত্রী। দেশের প্রথম সমুদ্রের নীচে রেল সুড়ঙ্গ তৈরির কথাও সংসদে বলেছেন অশ্বিনী। সমুদ্রের নীচে রেল যাতায়াতের জন্য ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ চলছে। উঠেছে বন্দে ভারতের প্রসঙ্গও। রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে দেশে ১০২টি বন্দে ভারত ট্রেন পরিষেবা চালু রয়েছে।  রেলমন্ত্রী এ-ও জানান, প্রাথমিক ভাবে বুলেট ট্রেনের প্রযুক্তি জাপানের কাছ থেকে নেওয়া হলেও এখন দেশের মাটিতে এমন অনেক প্রযুক্তি তৈরি হচ্ছে।

স্বাভাবিক ভাবেই তীব্র কটাক্ষ ধেয়ে এসেছে বিরোধী শিবির থেকে। বিরোধীদের বক্তব্য, মানুষের সুরক্ষার দিকে কোনও নজর নেই রেল কর্তৃপক্ষর। বরং দুর্ঘটনার বিষয় থেকে নজর ঘোরাতে বুলেট ট্রেনের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন রেলমন্ত্রী। সোমবার ঝাড়খণ্ডে ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছিল। মঙ্গলবার অবশ্য ওই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে বাজেট সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস জমানার তুলনায় তাঁর জমানায় রেলের বাজেট ৮ গুণ বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে।  তারপরও কীভাবে একের পর এক রেল দুর্ঘটনা তা নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন।

পর পর রেল দুর্ঘটনা নিয়ে এদিনই টুইটে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা দেশের প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “আজ আরও একটি রেল দুর্ঘটনা, উত্তরবঙ্গের একই ফাঁসিদেওয়া/রাঙাপানি এলাকায়, যেখানে মাত্র ছয় সপ্তাহ আগে সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল। যা ঘটছে তা নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন!”

১৪ দিনে ৮ বার রেল দুর্ঘটনা

  • ১৮ জুলাই – উত্তরপ্রদেশের গোন্ডায় চণ্ডীগড়-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ায় কমপক্ষে ৩১ জন আহত হন। মৃত্যু হয়েছে চার জনের। মোতিগঞ্জ ও ঝিলানি রেলস্টেশনের পাশে লাইনচ্যুত হয় ৮টি কামরা।
  • ১৯ জুলাই- উত্তরপ্রদেশের গোণ্ডায় চণ্ডীগড়-ডিব্রুগড এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ার একদিন পরেই গুজরাটের ভালাসাদ ও সুরাট স্টেশনের মাঝে একটি মালগাড়ি লাইচ্যুত হয়। তবে হতাহতের কোনও খবর নেই।
  • ২০ জুলাই- এই দিন উত্তরপ্রদেশের আমরোহা স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয় একটি মালগাড়ি। দুর্ঘটনার জেরে দিল্লি-লখনউ রেল লাইনে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। হতাহতের কোনও খবর নেই।
  • ২১ জুলাই- আলওয়ার রেল স্টেশনের কাছে মালগাড়ির তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। মথুরা সেকশনে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। এই ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর নেই। ওই একই দিনে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ায় একটি মালগাড়ি লাইনচ্যুত হয়। রানাঘাটের কাছে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ লাইনচ্যুত হয় মালগাড়িটি। এই ঘটনাতেও কোনও হতাহতের খবর নেই।
  • ২৬ জুলাই- এই দিন ভুবনেশ্বরের মাঞ্চেস্বর স্টেশনের কাছে একটি মালগাড়ির আটটি কামরা লাইনচ্যুত হয়। কিছুক্ষণের জন্য রেল পরিষেবা ব্যহত হয়।
  • ৩০ জুলাই- মঙ্গলবার ভোরে ঝাড়খণ্ডে মুম্বই-হাওড়়া মেল ১৮টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এই ঘটনায় প্রাণ হারান দুইজন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০। মঙ্গলবার ভোররাতে ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুর ডিভিশনে রাজখরসাওয়ান এবং বরাবাম্বুরের মধ্যবর্তী এলাকায় ১২৮১০ হাওড়া-ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়।
  • ৩১ জুলাই- ফাঁসিদেওয়ার কাছে একটি মালগাড়ির দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এই ঘটনাতেও কোনও হতাহতের খবর নেই।