বাবা রামদেব এবং পতঞ্জলির মালিক বালকৃষ্ণর ফের একদফা ক্ষমাভিক্ষা খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত এদিন রামদেব এবং পতঞ্জলি কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করে বলে, আমরা অন্ধ নই। পতঞ্জলির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় উত্তরাখণ্ডের লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষকে সমালোচনায় বিদ্ধ করে সর্বোচ্চ আদালত। কেন্দ্রের জবাবেও আদালত সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
সুপ্রিম কোর্ট গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় সরকারকে কড়া ভর্ৎসনা করেছিল। জানিয়েছিল, “আমরা বুঝতে পারছি না কেন সরকার তাদের চোখ বন্ধ রেখেছে।” এদিন কেন্দ্র তার জবাবে জানায, রাজ্যগুলিরও ক্ষমতা রয়েছে কোনও ‘দৈব ওষুধে’র বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার। তবে সেই সঙ্গেই কেন্দ্র জানিয়েছে, আইন মেনেই সময়মতো এই নিয়ে পদক্ষেপ করেছে তারা। পতঞ্জলি কোভিডের যে ওষুধ করোনিল তৈরি করেছিল, সে সম্পর্কে ওই সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল আয়ুষ মন্ত্রক ওষুধটি যাচাই না করা পর্যন্ত তারা যেন সেটির বিজ্ঞাপন না করে। পরে একটি আন্তর্বিভাগীয় তদন্তশেষে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, করোনিল কেবল কোভিড-১৯-এর সহায়ক ওষুধ হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে। সেই সঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে কোভিড চিকিৎসার জন্য আয়ুষ-সম্পর্কিত দাবির বিজ্ঞাপনগুলি বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। সেই সঙ্গেই কেন্দ্রের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও ব্যক্তি আয়ুষ না অ্যালোপ্যাথি, কী ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ করবেন সেটা তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত। সরকার চায় দুই ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থার সমন্বয়ে সামগ্রিক ভাবে নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরিষেবা।
বুধবার বিচারপতি হেমা কোহলি এবং এ আমানুল্লাহর সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রের বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয়। বিচারপতিরা বলেন, ‘এই ক্ষমাপ্রার্থনা কাগজে কলমে। আমরা গ্রহণ করছি না। বিষয়টিকে (বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন) ইচ্ছাকৃত ভাবে নিয়মের উলঙ্ঘন হিসেবে দেখছি।’ বিচারপতি কোহলি আরও জানান, রামদেব-বালাকৃষ্ণর হলফনামা প্রথমে মিডিয়াকে জাানানো হয় পরে শীর্ষ আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর থেকেই পরিষ্কার পতঞ্জলির প্রচার সর্বস্বতা।
মামলার হলফনামা পড়ার সময় বিচারপতি আমান্নুলা রামদেবের আইনজীবী মুকুল রোহতগীকে বলেন, ‘‘আপনারা হলফনামাতেও ফাঁকি দিচ্ছেন। এটা কে তৈরি করেছে, আমি অবাক।’’ এর পর মুকুল জানান, তাঁর মক্কেল আইনের বিষয়ে পেশাদার নন। তাই ভুল হয়েছে। এর পর রামদেবের ক্ষমাপ্রার্থনা আদৌ আন্তরিক কি না সেই প্রশ্ন তুলে বিচারপতি আমান্নুলা বলেন, ‘‘আমাদের নির্দেশের পরেও ভুল হয় কি করে? আমরা এই ক্ষেত্রে এতটা উদার হতে চাই না।’’ পুরো বিষয়টিতে সমাজে সঠিক বার্তা দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
আদালত এও বলে, রামদেব ও বালকৃষ্ণ তো হাজিরা এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তাঁরা বিদেশে ঘুরতে গিয়েছিলেন। শেষে এই মামলার রায়দান আগামী ১৬ এপ্রিল হবে বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে এত দিন পতঞ্জলির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করার জন্য শীর্ষ আদালতের ভৎর্সনার মুখে পড়েছে উত্তরাখণ্ড লাইসেন্সিং বিভাগও। সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, কেন উত্তরাখণ্ডের লাইসেন্সিং ইন্সপেক্টররা নিজেদের কাজ করেননি। লাইসেন্সিং বিভাগের তিন জন আধিকারিককে একসঙ্গে বরখাস্ত করা উচিত বলেও আদালতের পর্যবেক্ষণ। এর পর উত্তরাখণ্ড লাইসেন্সিং বিভাগকে উদ্দেশ করে সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, ‘‘আমরা বিষয়টি মোটেও হালকা ভাবে নেব না। আমরা কোনও ভাবেই ছেড়ে কথা বলব না।’’
বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন নিয়ে একাধিকবার সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে পড়েছে পতঞ্জলি। গত নভেম্বর মাসে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, ভুয়ো তথ্য দেওয়া বিজ্ঞাপন তৈরি করলে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার মুখে পড়তে হবে। গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) হাজিরা দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান যোগগুরু রামদেব (Ramdev)। পরে বিস্তারিত হলফনামা দিয়ে জানান, এই ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে না। যোগগুরু একা নন, পতঞ্জলির ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা রামদেবের সহযোগী আচার্য বালকৃষ্ণও শীর্ষ আদালতে হলফনামা দাখিল করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।