১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর।শাবল, গাঁইতি, বর্ষা নিয়ে ষোড়শ শতকের বাবরি মসজিদের মাথায় উঠে পড়েছিলেন উন্মত্ত জনতা। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই মসজিদ। তার পর পেরিয়ে গিয়েছে ৩২ বছর। অযোধ্যার বাবরি মসজিদের সেই বিতর্কিত জমিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নির্মিত হয়েছে রাম মন্দির। প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে রামলালার। পাশাপাশি সর্বোচ্চ আদালত অযোধ্যায় মসজিদ নির্মাণের জন্যও জমি বরাদ্দ করেছিল। কিন্তু বিশ বাঁও জলে সে মসজিদ নির্মাণ।
২০১৯ সালে অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিল, হিন্দুদের ২.৭৭ একর জমির পাশাপাশি মুসলিম পক্ষকেও পাঁচ একর জমি দিতে হবে। অযোধ্যা জেলারই ধন্যিপুরে সেই জমি দেওয়া হয়েছিল। গত ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন হয় রামমন্দিরের। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছিলেন যজমানের ভূমিকায়। অথচ মসজিদ কাজ এখনও শুরুই হয়নি। মসজিদের প্রস্তাবিত জমি এখনও খাঁ খাঁ করছে। বাচ্চারা ক্রিকেট খেলছে।
অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি যেখানে, তার থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ধন্যিপুর গ্রামেই নতুন বাবরি মসজিদ তৈরি হওয়ার কথা। তবে আপাতত সেখানে একটি সাদা বোর্ডই লাগানো রয়েছে, যেখানে বাবরি মসজিদ তৈরির কথা উল্লেখ করা আছে। ব্যস, এইটুকুই। এর বাইরে আর কিছুই তৈরি হয়নি। যাবতীয় পরিকল্পনা ড্রয়িং বোর্ডেই রয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৯০ লক্ষ টাকা অনুদান হিসেবে জমা পড়েছে মসজিদের ট্রাস্টে। সংবাদমাধ্যমে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অযোধ্যা মসজিদ ট্রাস্টের চিফ ট্রাস্টি জ়াফর ফারুকি কয়েক মাস আগে বলেন, ‘মানুষের মসজিদ নিয়ে আগ্রহ নেই। আমরা বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি। জমা পড়া তহবিল থেকেই বোঝা যাচ্ছে মানুষের আগ্রহ কত।’
মসজিদ তৈরির পরিকল্পনার সময় সেখানে হাসপাতাল, মিউজ়িয়াম এবং রিসার্চ সেন্টার তৈরির কথা ছিল। কিন্তু তহবিলে কম অনুদান জমা পড়ায়, সেই পরিকল্পনা আপাতত বাতিল বলেই জানা যাচ্ছে। মসজিদের ট্রাস্টি আথার হুসেনের কথায়, ‘এই সব তৈরি করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। আপাতত আমরা মসজিদ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছি। শুধু মসজিদ তৈরি করতেই কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা খরচ হবে। আমাদের সেই টাকা নেই।’
অথচ পরিকল্পনায় রয়েছে পাঁচ মিনার বিশিষ্ট এই মসজিদটি হবে ৩৪০ ফুট উঁচু। মহিলাদের জন্যও নমাজের বিশেষ অংশ রাখা হবে। দেওয়ালে খোদাই করা হবে কোরানের লাইন দিয়ে তৈরি ক্যালিগ্রাফি। মসজিদ চত্বরে থাকবে একটি বড় বাগান, ফোয়ারা। থাকবে ২১ বাই ৩৬ ফুটের থাকবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কোরান। একটি বিরাট অ্যাকোরিয়াম এবং আন্ডারওয়াটার জ়ু-এর পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে অর্থের অভাবে সবটাই এখন বিশ বাঁও জলে।