বিরোধী শূন্য লোকসভায় বুধবার পাস হয়ে গেল ন্যায় সংহিতা বিল।
শীতকালীন অধিবেশনের শুরু থেকে মোট ৯৭ জন বিরোধী সাংসদ সাসপেন্ড হয়েছেন। বুধবারও দুপুরের দিকে সাসপেন্ড হয়ে যান দুই সাংসদ। তার পরেই কার্যত ফাঁকা সংসদে ন্যায় সংহিতা বিল নিয়ে আলোচনা শুরু করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারতীয় সংবিধানকে প্রাধান্য দিয়েই তৈরি হয়েছে এই তিনটি বিল। আমজনতার উন্নয়নের সঙ্গে ভারতীয়ত্বকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নতুন বিলগুলোতে।
চলতি বছরেই সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষদিনে ফৌজদারি আইনের পরিবর্তে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও ভারতীয় সাক্ষ্য বিল পেশ করেছিলেন শাহ। তার পরেই বিলগুলোকে সংসদের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটির কাছে আলোচনার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কমিটির বৈঠকে শাসক-বিরোধী সংঘাতও তুঙ্গে উঠেছিল সেই সময়ে। কেন্দ্র সরকার বিলগুলো নিয়ে তাড়াহুড়ো করছে, উপযুক্ত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়নি বলে সরব হয়েছিলেন কমিটিতে থাকা ইন্ডিয়া জোটের সাংসদরা। বিলগুলো নিয়ে ‘ডিসেন্ট নোট’ বা ‘আপত্তি পত্র’ ও জমা দিয়েছিলেন তাঁরা। অবশেষে কার্যত বিরোধীশূন্য সংসদে পাশ হল তিনটি বিল।
বিদ্বেষপূর্ণ অপরাধের কারণে খুনের ঘটনায় ন্যূনতম শাস্তি সাত বছর থেকে বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করার সুপারিশ করেছে সরকার। গণপিটুনির ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড তো বটেই, মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞায় আরও অনেক কিছু সংযুক্ত করা হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদের অপরাধের অধীনে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা এখন ভারতের প্রতিরক্ষা বা অন্য কোনও সরকারি উদ্দেশ্যে বিদেশে সম্পত্তির ক্ষতি বা ধ্বংসকে শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় এনেছে। আগের সংস্করণে শুধুমাত্র ভারতের মধ্যে সরকারি বা বেসরকারি সম্পত্তিহানি, প্রকাশ্য স্থানে হামলার মধ্যে বিষয়টি সীমাবদ্ধ ছিল।
এছাড়া কোনও ব্যক্তিকে আটকে রাখা বা অপহরণ করার ঘটনায় কেন্দ্র, রাজ্য বা বিদেশের সরকারকে কোনও পদক্ষেপ করতে বাধ্য করা বা না করার বিষয়টিও ‘সন্ত্রাসবাদ’-এর আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। এই বিলে প্রথমবারের মতো গণপিটুনি এবং বিদ্বেষপূর্ণ অপরাধে হত্যার ঘটনাকে একটি পৃথক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতি, বর্ণ, সম্প্রদায় বা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের মতো কারণের উপর ভিত্তি করে পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির একটি হত্যার ঘটনা ঘটলে তা এই বিশেষ বিভাগের আওতায় পড়বে।
এছাড়া ছোটখাট চুরি ছিনতাই, মানহানি, এবং সরকারি আধিকারিককে তাঁর কর্তব্য পালন থেকে বিরত করার জন্য আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় প্রচলিত শাস্তির পরিবর্তে সমাজসেবা করানোর প্রস্তাব আনা হয়েছে। যদিও ঠিক কী ধরনের সমাজসেবা করানো হবে, সেটা স্পষ্ট করা হয়নি।