বিলকিস বানো গণধর্ষণের মামলায় আগাম মুক্তি পেয়েছিলেন ১১ জন সাজাপ্রাপ্ত। সোমবার সেই রায় খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ফের জেলে ফিরতে হবে অপরাধীদের। শীর্ষ আদালতের এই রায়ে দেড় বছর পর স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললেন বিলকিস বানো। এদিনের রায়ের পর বিলকিস বানো বলেন, ‘আজ আমার জন্য সত্যিকারের নববর্ষ। ন্যায়বিচার একেই বলে৷ আমাকে, আমার সন্তানদের এবং সব নারীদের ন্যায়বিচারের বিশ্বাস এবং ভরসা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ জানাই৷’
নিজের আইনজীবী শোভা গুপ্তার মাধ্যমে প্রকাশ করা বিবৃতিতে এই রায় নিয়ে বিলকিস বানো বলেন, ‘এই রায় শুনে আমি স্বস্তিতে কেঁদে ফেলেছিলাম। প্রায় একবছরেরও বেশি সময় পর আমার মুখে হাসি ফুটেছে। আমি আমার সন্তানদের জড়িয়ে ধরেছি। মনে হচ্ছে, আমার বুকের থেকে এক বিশাল বড় পাহাড় নেমে গিয়েছে। আমি আবারও নিশ্বাস নিতে পারছি।’
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ প্রকাশ্যে আসার পরে বিলকিস ধন্যবাদ জানিয়েছেন শীর্ষ আদালতকে, তাঁর পরিবার এবং ‘দেশে সমান বিচারে’র জন্য লড়া সমস্ত মহিলাকে। ২০২২ সালের ১৫ অগস্ট ধর্ষকেরা আগাম মুক্তি পাওয়ায় তিনি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিলেন বলে জানান বিলকিস। গুজরাত সরকার জানিয়েছিল যে, জেলে ওই ১১ জন ধর্ষক এবং খুনি ‘ভাল আচরণ’ করেছেন, সে কারণেই তাঁদের সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছে। দীর্ঘ দিন বিলকিসের হয়ে আইনি লড়াই চালানো শোভা এই ‘ভাল ব্যবহার’-এর যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, “ভাল ব্যবহারের প্রতিফলন কোথায়? কোথাও তার প্রমাণ নেই।”
২০০২ সালে গোধরাকাণ্ডের পর গুজরাতে হিংসা চলাকালীন ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারেন হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি ১১ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাবাসের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। মামলা চলাকালীন এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছিল। মুক্তি দেওয়া প্রসঙ্গে গুজরাত সরকারের যুক্তি ছিল, জেলে ওই ১১ জন ধর্ষক এবং খুনি ‘ভাল আচরণ’ করেছেন, সে কারণেই তাঁদের সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছে।
রায় অনুযায়ী, অপরাধীদের আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এদিকে অপরাধীদের আগাম জামিন দেওয়ার প্রেক্ষিতে গুজরাট সরকারকে ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণ করেছে, এই সিদ্ধান্ত মাথা না খাটিয়ে নেওয়া এক সিদ্ধান্ত।