দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় বেনজির পদক্ষেপ। এবার আর্থিক তছরুপে ‘অভিযুক্ত’ হিসাবে ‘আম আদমি পার্টি’ (আপ)-র নাম চার্জশিটে রাখল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। উল্লেখ্য, আপই দেশের প্রথম স্বীকৃত রাজনৈতিক দল, দুর্নীতির মামলায় যাকে অভিযুক্ত হিসাবে দেখানো হয়েছে।
আবগারি মামলায় শুক্রবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে অতিরিক্ত চার্জশিট দাখিল করে ইডি। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সি এই মামলায় সাতটি চার্জশিট দাখিল করেছিল। এই প্রথম চার্জশিটে কেজরির নাম রাখল ইডি। পাশাপাশি তাঁর দল আপকেও চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে কেজরিওয়ালের মামলার শুনানি চলাকালীন ইডির তরফে চার্জশিটের কথা উল্লেখ করেছে। ইডির আইনজীবী, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু জানান, বিশেষ আদালতে বিচারাধীন আবগারি দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হিসাবে কেজরির তৈরি দলের নামও উল্লিখিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ওই মামলায় একটি অতিরিক্ত চার্জশিট জুড়ে দিয়ে আপকে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত করা হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের কাছে প্রত্যক্ষ প্রমাণ রয়েছে যে গোয়ায় ভোটপ্রচারে গিয়ে কেজরীওয়াল এক বিলাসবহুল হোটেলে ছিলেন। সেই হোটেলের বিল পরিশোধ করেছিলেন এই মামলার অন্য এক অভিযুক্ত।’’
গত ২১ মার্চ মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকে কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। আবগারি মামলার সঙ্গে কেজরীর কী সম্পর্ক তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বার বার ইডি আপ প্রধানকে ‘কিংপিন’ বলেছে। আবগারি ‘দুর্নীতি’তে কেজরীওয়ালের যোগ থাকার কথা বলতে গিয়ে আপকে একটা ‘কোম্পানি’র সঙ্গে তুলনা করেছে ইডি। শুধু তা-ই নয়, কেজরীওয়ালকে সেই ‘কোম্পানি’র ডিরেক্টর বলেও উল্লেখ করেছে তারা। তাদের যুক্তির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইডি বেআইনি ভাবে অর্থ লেনদেন বা পিএলএমএ আইনের ৭০ নম্বর ধারার কথা উল্লেখ করেছিল।
সরাসরি দুর্নীতির মামলায় গোটা রাজনৈতিক দলকেই কাঠগড়ায় তুলে দেওয়ার এহেন ঘটনা এদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। বলে রাখা ভালো, আবগারি দুর্নীতির মামলায় কেজরির সঙ্গে দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া এবং আপের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেককেই জড়িয়েছে ইডি। এ বার আবগারি দুর্নীতির টাকা দলের কাজে খরচ করার অভিযোগ এনে সেই বৃত্তে আপকেও নিয়ে এল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এই ঘটনায় আপের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়তে চলেছে। তছরুপে দোষী প্রমাণিত হলে আদৌ দলটির অস্তিত্ব থাকবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। অনেকেই আবার বলছে, ইডির মামলা দীর্ঘকাল চললেও ক্ষতি হবে কেজরির দলেরই। কারণ, ‘তদন্তের স্বার্থে’ দলীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা বা নেতা-কর্মীদের সমন পাঠিয়ে দলের সাংগঠনিক পরিকাঠামোকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা চলবেই।