শুক্রবার ‘হাত’ ছাড়লেন বর্ষীয়ান নেতা গুলাম নবি আজাদ। কংগ্রেসের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। পদত্যাগপত্রে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন গুলাম। লিখেছেন, ‘দেশের জন্য যা ভাল, তা করতে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস।’ আজাদ কংগ্রেস সভানেত্রীকে যে বিস্ফোরক চিঠিটি লিখেছেন, তাতে রাহুল গান্ধীকে কার্যত তুলোধোনা করা হয়েছে। ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে নয়, কংগ্রেসের (Congress) বর্তমান দুর্গতির জন্য যে একক ভাবে রাহুল গান্ধীই দায়ী, সেটা চিঠিতে প্রতিপন্ন করে ছেড়েছেন আজাদ।
পাঁচ পাতার পদত্যাগপত্রে গুলাম নবি লিখেছেন, ‘গোটা সাংগঠনিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াই একটা প্রহসন। দেশের কোথাও সংগঠনের কোনও পর্যায়ের নির্বাচনই হয়নি।এই সব ঘটেছে, তার কারণ, গত আট বছরে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি এক জন ‘অপরিণত’ ব্যক্তিত্ব।’ গুলাম জানিয়েছেন, ‘একরাশ কষ্ট চেপে’ শতাব্দীপ্রাচীন দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেইসঙ্গে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ জি-২৩ গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা জানিয়েছেন, ‘ভারত জোড়ো যাত্রার’ আগে ‘কংগ্রেস জোড়ো যাত্রা’ করা উচিত।
সোনিয়াকে (Sonia Gandhi) লেখা চিঠিতে আজাদ দাবি করেছেন, “২০১৩ সালে রাহুল গান্ধী দলের সহ-সভাপতি হওয়ার পরই সব সিনিয়রকে কোণঠাসা করা হয়েছে। বদলে অনভিজ্ঞ ধান্দাবাজরা দল চালাচ্ছেন।” তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়া অর্ডিন্যান্স যেভাবে ছিঁড়ে দিয়েছিলেন, তাতে কংগ্রেসের নেতার ‘অপরিণতবোধ’ ফুটে উঠেছিল। গুলামের কথায়, ‘ওই শিশুসুলভ আচরণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের কর্তৃত্ব সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছেিল। অন্য কিছুর তুলনায় ওই একটা কাজই ইউপিএ সরকারের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল।’
Congress leader Ghulam Nabi Azad severs all ties with Congress Party pic.twitter.com/RuVvRqGSj5
— ANI (@ANI) August 26, 2022
আরও পড়ুন: বিলকিস বানু মামলা : যাবজ্জীবন দণ্ডিতদের মুক্তির বিরুদ্ধে আবেদন শুনবে সুপ্রিম কোর্ট
সেখানেই থামেননি গুলাম। কড়া ভাষায় তিনি দাবি করেন, রাহুলের তল্পিবাহকদের অধীনে ইচ্ছাশক্তি হারিয়ে যায় কংগ্রেসের। ভারতের অধিকারের লড়াইয়ের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে শতাব্দীপ্রাচীন দল। এখানেই থামেননি আজাদ। দীর্ঘ চিঠিতে তিনি আরও দাবি করেছেন, “২০১৪ সালের পর রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) নেতৃত্বে কংগ্রেস দুটি লোকসভা নির্বাচনে লজ্জাজনকভাবে হেরেছে। ৪৯টি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে ৩৯টি হেরেছে। এর মধ্যে কংগ্রেস নিজের দমে মাত্র ৪টি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে জিতেছে। আর ৬ বার জোটসঙ্গীদের সঙ্গে ক্ষমতায় এসেছে। দুঃখজনকভাবে আজ কংগ্রেস মাত্র দুটি রাজ্যে ক্ষমতায়। আর দুটি রাজ্যে শাসক জোটের প্রান্তিক শক্তি।” আজাদ বলছেন, “২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পর দলের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। এর মধ্যে রাহুল দলকে বিপদে ফেলে ইস্তফা দিলেন। তার আগেই অবশ্য দলের সেইসব সিনিয়র নেতাদের তিনি অপমান করে ফেলেছেন, যাঁরা নিজেদের জীবন দিয়ে দিয়েছেন দলের হয়ে।”
জি-২৩ নেতাদের রাহুলপন্থীরা যেভাবে আক্রমণ করেছেন, সেটা নিয়েও সরব হয়েছেন আজাদ। শেষে তিনি সাফ বলে দিয়েছেন, “নেতৃত্বের দোষে কংগ্রেস এমনভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, যে এখান থেকে আর ফেরা সম্ভব নয়। ঠিক যে মডেলে ইউপিএ-২ সরকার ভেঙে পড়েছিল, দলের অন্দরেও এখন সেই পদ্ধতি চলছে। রাহুল গান্ধীর নিরাপত্তারক্ষী এবং আপ্তসহায়ক দল চালাচ্ছে।” সম্ভাব্য অ-গান্ধী কাউকে সভাপতি করা নিয়েও কটাক্ষ করেছেন বর্ষীয়ান এই নেতা। তিনি বলছেন, “এখন আমাদের এমন অবস্থা যে দল চালানোর জন্য প্রক্সি খুঁজতে হচ্ছে। এই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হবে। কারণ ৮ বছরে নেতৃত্বের অপদার্থতায় কংগ্রেস এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, যেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।”
আরও পড়ুন: Supreme Court: বিলকিস গণধর্ষণে দোষীদের মুক্তি নিয়ে গুজরাত সরকারের জবাব তলব