বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী মুখ কে? এত দিন পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে বিরোধী নেতারা বলতেন, ভোটের পর তা ঠিক হবে। সোমবারও মমতা সেই কথা বলেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে সেই মমতাই চমক দিলেন। বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসেবে সরাসরি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম প্রস্তাব করেন মমতা। তাঁকে সমর্থন করলেন কংগ্রেসের ‘তীব্র বিরোধী’ হিসেবে পরিচিত আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। যদিও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি মঙ্গলবারের জোট বৈঠকে।
মঙ্গলবার দিল্লিতে হল ‘ইন্ডিয়া’র চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ বৈঠক। বৈঠক শুরু হয় বেলা ৩টের কিছু পরে। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। মমতা বৈঠকে বলেন, খড়্গে অভিজ্ঞ রাজনীতিক। তিনি অনগ্রসর শ্রেণি থেকে উঠে আসা। তাই তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী মুখ করে ২০২৪-এর ভোটে লড়াইয়ের দিকে যাওয়া হোক। যদিও খড়্গে এর পর বলেন, তিনি গরিব মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে এসেছেন। আর আগেভাগে এ সব করার কোনও দরকার নেই। ভোটে জেতার পর এই বিষয়গুলি ঠিক করা হোক।মমতার প্রস্তাবে কেজরিওয়াল সমর্থন করেছেন এটা যেমন ঠিক, তেমন বাকি দলগুলি এই প্রস্তাব নিয়ে খুব একটা উৎসাহ দেখাননি সেটাও বাস্তব।
শোনা যাচ্ছে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আগামী লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশের কোনও আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন। তফসিলিদের জন্য সংরক্ষিত কোনও আসন থেকে তাঁকে প্রার্থী করার কথা ভাবা হচ্ছে। এই প্রস্তাব নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের দুই শরিক সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এবং রাষ্ট্রীয় লোকদলের সভাপতি জয়ন্ত চৌধুরির সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।
খাড়গে প্রার্থী হলে শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, গোটা দেশেই লোকসভা ভোটের অঙ্ক বদলে যেতে পারে। কংগ্রেস সভাপতি দলিত অর্থাৎ তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত। উত্তরপ্রদেশে জনসংখ্যার ২০ শতাংশ দলিত। গো-বলয়ের ওই রাজ্যে দলিতরা দীর্ঘদিন কংগ্রেসের পাশে ছিল। বহুজন সমাজবাদী পার্টির উত্থানের পর দলিত ভোটের সিংহভাগ ওই আঞ্চলিক দলের দখলে চলে যায়। বস্তুত, দলিত ভোটারদের সমর্থনেই ২০০৭-এ বিএসপি নেত্রী মায়াবতী তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু বিএসপি’র ওই ভোট ব্যাঙ্কের সিংহভাগ এখন বিজেপির দখলে।
কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোটের অনেক নেতাই মনে করছেন খাড়গের মতো পরিচ্ছন্ন ইমেজের মানুষ প্রার্থী হলে গোটা দেশেই লাভবান হবে দল। শুধু প্রার্থী করাই নয়, কংগ্রেস সূত্রের খবর, খাড়গেকে লড়াইয়ে এগিয়ে দিয়ে দল বার্তা দিতে চায়, দল সরকার গড়ার সুযোগ পেলে এই দলিতকেই প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি এগিয়ে দেওয়া হবে।