ইজরায়েল-ফিলিস্তিন প্রশ্নে নিজের সাম্প্রতিক অবস্থান ‘বদল’ করল নয়াদিল্লি। আরব বিশ্বের আবেগের গতিমুখ বুঝেই এই পরিবর্তন বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
শনিবার ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নতুন করে শুরু হওয়ার পর পরই প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছিলেন, এই লড়াইয়ে ভারত পুরোপুরি ইজরায়েলের পাশে আছে। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ফোনে কথাও হয়। একাধিক বিশ্ব নেতার সঙ্গে কথা বলার পর ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হুমকি দেন, গাজা ভূখণ্ড বিশ্ব মানচিত্র থেকেই মুছে দেবেন তাঁরা। সাড়ে তিন লাখ ইজরায়েলি পদাতিক সেনা গাজার প্রবেশের মুখে চূড়ান্ত নির্দেশ অপেক্ষায়।
কিন্তু সরকারিভাবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, ফিলিস্তিন নিয়ে নয়াদিল্লির অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি। ভারত একটি স্বাধীন, সবল ফিলিস্তিনের পক্ষে। পরারাষ্ট্রমন্ত্রকের মুখপাত্র অরবিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে ভারতের নীতি দীর্ঘস্থায়ী এবং ধারাবাহিক। ভারত সর্বদাই ইসরায়েলের পাশাপাশি নিরাপদ ও স্বীকৃত সীমানার মধ্যে বসবাসকারী একটি সার্বভৌম, স্বাধীন এবং কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে। এজন্য যুদ্ধ থামিয়ে পুনরায় সরাসরি আলোচনা শুরু করার পক্ষে ভারত।
প্রসঙ্গত ৭ অক্টোবর রকেট হামলার পর বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এটিই প্রথম বিবৃতি। ইতিমধ্যে দু’বার মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। হামাসের হামলাকে ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, এই কঠিন সময়ে ভারত সর্বতো ভাবে ইজরায়েলের পাশে রয়েছে। আজকের অবস্থান ‘বদল’কে, বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য বদল বলে স্বীকার করতে চায়নি। মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা করেছিলেন। তিনি সার্বিক ভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। তাঁর সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান একই আছে।
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশগুলি দ্রুত শান্তি ফেরানোর কথা বললেও তাদের বিবৃতিতে হামাস সম্পর্কে নিন্দা নেই। মোদী সরকারের আমলে পশ্চিম এশিয়ার এই দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কে উল্লেখজনক উন্নতি হয়েছে। আমদানি ক্ষেত্রে নির্ভরতা বেড়েছে। পাকিস্তানকে মুসলিম বিশ্বে কোণঠাসা করতে সৌদিকে সময়বিশেষে পাশে পেয়েছে সাউথ ব্লক। ফলে প্রাথমিক ভাবে হামাসকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে মোদী ঘরোয়া রাজনীতিতে হিন্দুত্বের ধ্বজা ওড়ালেও আরব মনের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে আজ ‘স্বাধীন সার্বভৌম’ ফিলিস্তিনের কথা বলেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র। অর্থাৎ ইজরায়েল-পন্থী হিসাবে চিহ্নিত একপেশে অবস্থানের পর একটি ভারসাম্যের কূটনীতিতে ফিরতে দেখা গিয়েছে ভারতকে।
‘ভারত-বন্ধু’ বলে খ্যাত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইজরায়েলের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বকে একজোট হওয়ার কথা বলেছেন। আরব দূনিয়ার প্রতিক্রিয়াও তাই। ভারতের জন্য মার্কিন সখ্য যেমন জরুরি, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ আরব দূনিয়া এবং রাশিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়ার। বিশেষ করে জ্বালানির সংকটে গোটা বিশ্ব যখন জেরবার তখন রাশিয়া এবং আরব বিশ্বের সঙ্গে সমীকরণ স্বাভাবিক রাখাও নয়াদিল্লিকে ভাবনার মধ্যে রাখতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Gangajal GST: গঙ্গাজলের উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি? কংগ্রেসের অভিযোগের পাল্টা বিবৃতি কেন্দ্রের