বৃহস্পতিবার হিজাব নিষিদ্ধ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছে আমরা পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যাকারী নই।তাছাড়া কর্ণাটক হিজাব নিষিদ্ধ মামলায় আগেই বলা হয়েছে পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা করার মত যোগ্যতা আদালতের নেই। বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ এ কথা জানিয়েছেন। মামলার পরবর্তী শুনানি (আর্গুমেন্ট) হবে ১৯ সেপ্টেম্বর।
কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে যারা সুপ্রিম কোর্টে এসেছেন তাদের মামলার শুনানি হচ্ছে। তারা মনে করেন কর্ণাটকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। সেখানেই একজন মামলাকারী বলেছেন কর্ণাটক হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে তা ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক নয়। তা ইসলামের ধর্মীয়ও মূল্যবোধকে আহত করেছে।
শীর্ষ আদালত বেশ কয়েকজন আইনজীবীর যুক্তি শুনেছে। যারা আসলে হিজাব পরা কে ব্যাক্তির গোপনীয়তা, মর্যাদা ও স্বাধীনতা হিসাবে আদালতের সামনে উপস্থিত করেছেন। এটিকে একশ্রণীর পরিধানের অভ্যাস হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে কেন হিজাব তাদের কাছে অপরিহার্য তাও বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।অ্যাডভোকেট শোয়েব আলম যুক্তি দিয়েছিলেন যে, হিজাব পরা একজন ব্যক্তির মর্যাদা, গোপনীয়তা এবং স্বাধীনতার বিষয়।
তিনি বলেন, "একদিকে, আমার শিক্ষার অধিকার আছে, স্কুলে যাওয়ার অধিকার আছে, অন্যদের সাথে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে। অন্যদিকে, আমার অন্য অধিকার আছে, যা গোপনীয়তা, মর্যাদা এবং স্বাধীনতার অধিকার।আলম বলেন, নির্ধারিত ইউনিফর্ম সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করার সরকারি আদেশ হল, আমি তোমাকে শিক্ষা দিচ্ছি, তোমার গোপনীয়তার অধিকার দিচ্ছি। তুমি আমার কাছে আত্মসমর্পণ করো। রাষ্ট্র কি তা করতে পারে ? উত্তর হল না।রাষ্ট্র তা করতে পারে না। রাজ্য কোনো ব্যক্তিকে এমন আদেশ দিতে পারে না, যাতে স্কুলের দরজায় দাঁড়িয়ে তাঁকে নিজের অধিকার বিসর্জন দিতে হয়।
সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেছেন, বিষয়টি সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানো উচিত।সিব্বল বলেন, প্রশ্ন হল যদি হিজাব পরার অধিকার কোনও পাবলিক প্লেসে পাওয়া যায়, তবে স্কুলে কি তার অধিকার শেষ হয়ে যায়।তিনি বলেন, হিজাব পরা মানে আপনি কী, আপনি কে, আপনি কোথা থেকে এসেছেন তার প্রকাশ। তাঁর যুক্তি, হিজাব ব্যক্তিত্বের এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও একটি অংশ।
সিনিয়র আইনজীবী কলিন গনসালভেস বলেন, এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল হিজাব পরার অভ্যাস ধর্মের জন্য অপরিহার্য কি না। গনসালভেস বলেন, উচ্চ আদালতের রায় আসলে "সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়" এর ধারণার প্রতিফলন।যেখানে সংখ্যালঘুদের দৃষ্টিভঙ্গি "পক্ষপাতমূলক এবং ভুল দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে।
এটি মূলত একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়।সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের দৃষ্টিকোণ থেকে কর্ণাটক হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। এটি সাংবিধানিক স্বাধীনতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যা একটি রায়ের কেটে অবশ্যই থাকা উচিত। তিনি বলেন, কেবল যুক্তির বিচারের ভিত্তিতেই সর্বোচ্চ আদালতের উচিত কর্ণাটক আদালতের রায় বাতিল করা। গনসালভেস বলেন,আমি এই ফারাক দেখে অবাক হচ্ছি। আপনি যদি পাগড়ি পরতে পারেন, তাহলে হিজাব পরতে পারবেন না কেন? তফাৎটা ঠিক কোথায় । আইনজীবী গনসালভেস আরও বলেন শীর্ষকোর্টের 'পোশাক খুলে ফেলা' যুক্তিগুলি ছিল দুর্ভাগ্যজনক। যদি হিবা পরিহিতা কোনো মুসলিম মেয়েকে নিরাপোতারখিরা হিজাব খুলতে বাধ্য করেন, তাহলে সেই তাঁর কাছে আসলে পোশাক খুলতে বলার মতই অপমানজনক মনে হয়। হিজাব বিতর্কের শুনানির সময়, সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি মন্তব্য করেছে যে পোশাক পরার অধিকার মানে পোশাক খোলার অধিকারও।সংখ্যালঘু অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক নৈতিকতাকে দেখতে হবে সংখ্যালঘুর চোখ দিয়ে। সেটা শুরু করতে হবে। একজন সংখ্যাগুরুর এই অধিকারের গুরুত্ব যেমন অনুভব করতে পারবেন না, তেমনই ধরতে পারবেন না এর অনুভূতি।
সিনিয়র আইনজীবী মীনাক্ষী অরোরা বলেন, বিশ্বজুড়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হল ইসলাম।যারা ইসলাম অনুশীলন করেন তাঁরা হিজাব পরাকে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুশীলনের অংশ মনে করেন। সিনিয়র আইনজীবী দুষ্যন্ত দাভে বলেন বেঞ্চকে বলেছিলাম এই মামলার আর্গুমেন্টের জন্য যেন খানিকটা বেশি সময় দেওয়া হয়। কারণ এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা। তিনি বলেন সে কারণেই এই মামলা বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানো উচিত। আমার কাজ হল বিচারপতিদের বোঝানো কেন কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়কে বাতিল করা উচিত।বিচারপতিদের উচিত মামলাটি অত্যন্ত মনযোগ সহকারে শোনা।বিচারপতিরাই নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের হেফাজতকারী।