সংরক্ষণের শর্ত না মেনে কেন্দ্রীয় সরকারের যুগ্মসচিব, উপসচিব ও অধিকর্তা পদে ৪৫ জনকে নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা ইউপিএসসি-র চেয়ারপার্সনকে এক চিঠিতে এই নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন বাতিল করতে বলেছেন।
শনিবার ইউপিএসসি ৪৫ পদের জন্য একটি বিজ্ঞাপন জারি করেছিল। তাতে ১০ জন যুগ্মসচিব এবং ৩৫ জন ডিরেক্টর, উপসচিব পর্যায়ের পদের জন্য আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছিল। আইএএস হওয়া আমলারাই এতকাল পদোন্নতির ভিত্তিতে এই পদমর্যাদায় আসতেন। কিন্তু এই নিয়োগে চুক্তিভিত্তিক বাইরে থেকে লোক নিয়োগের ব্যবস্থা হয়। সরকারি দফতর ও মন্ত্রকে বেসরকারি সংস্থা থেকেও বিশেষজ্ঞদের আবেদন চাওয়া হয়।
এদিন সেই বিজ্ঞাপন বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন জিতেন্দ্র। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করেন যে সরাসরি নিয়োগের প্রক্রিয়া অবশ্যই আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ন্যায় এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতিগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। বিশেষত, সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিধিগুলির বিষয়ে।’’ সেই সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ‘স্বচ্ছ’ এবং ‘উন্মুক্ত’ করার কথাও বলেছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে বেসরকারি সংস্থার পদস্থ কর্তাদের নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গতকাল, সোমবার সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা এনডিএ-র শরিক চিরাগ পাসোয়ান (রামবিলাস-পুত্র)। তাঁর বক্তব্য, পিছিয়ে থাকা অংশের মানুষের সংরক্ষণের সুবিধা কেড়ে নিয়ে বেসরকারি কোম্পানির আধিকারিকদের বসানোর সরকারি সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধী তাঁর দল লোক জনশক্তি। চিরাগের দাবি, সমস্ত সরকারি পদে ইউপিএসসি-র নিয়ম মেনে নিয়োগ করতে হবে। সংরক্ষণকে অস্বীকার করা যাবে না।
তারও আগে একই দাবি তোলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। তাঁর বক্তব্য, পিছিয়ে পড়া ও সংখ্যালঘুদের পদোন্নতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। রাহুল গান্ধী রবিবার অভিযোগ করেছিলেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত আরএসএস অনুগামীদের বসানো হচ্ছে।
শুধু চিরাগ নন, বিহারের বিজেপির আর এক সহযোগী নীতীশ কুমারের জেডি (ইউ)-র তরফেও সরাসরি আমলা নিয়োগের বিরোধিতা করা হয়েছিল। অন্য দিকে, মোদী সরকারের যুক্তি, কর্পোরেট বা শিক্ষাজগৎ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের জন্যই এই সিদ্ধান্ত। ২০০৫ সালে তৎকালীন ইউপিএ সরকারের প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করেই সমান্তরাল নিয়োগের এই পদ্ধতি বলেও যুক্তি দিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিরোধী ও শরিকি চাপেই মোদী সরকারকে পিছু হটতে হল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।