চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি রাম মন্দির উদ্বোধন করেছেন নরেন্দ্র মোদী। ২৩ জানুয়ারি থেকে রাম মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে সর্বসাধরণের জন্য। রাম মন্দিরের উদ্বোধনের পর থেকেই মন্দির তৈরির ইস্যুকে সামনে রেখে ভোট প্রচারে জোর দিয়েছে গেরুয়া শিবির। লোকসভা ভোটের আগে রাম মন্দির উদ্বোধন কি বিজেপিকে বাড়তি মাইলেজ দেবে? কী মনে করেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর? এবার তা নিয়ে মন্তব্য করলেন তিনি।
রাম মন্দিরের নামে একটিও বাড়তি ভোট পাবে না বিজেপি, সম্প্রতি অন্ধ্র প্রদেশে আরটিভি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেন পিকে। তাঁর কথায়, ‘বিজেপির সমর্থকদের জন্য রাম মন্দির বড় ইস্যু হতে পারে। তবে আমি এমন কাউকে খুঁজে পাইনি যিনি আগে রাম মন্দির তৈরি না হওয়ার জন্য বিজেপিকে ভোট দেননি আর এখন তা তৈরি হয়েছে বলে তিনি বিজেপিকে ভোট দেবেন। এতে ক্রমবর্ধমান সুবিধা নেই।’
তাঁর মতে, কোনও দল বা নেতা বিজেপির ব্র্যান্ড মোদীর সামনে চ্যালেঞ্জ ঠুকে দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু, দেশের জনতা তাঁর সামনে সেই প্রতিরোধের দেওয়াল তুলে দাঁড়াতে পারে।পিকে আরও বলেন, ‘বিরোধী দলগুলি দুর্বল হতে পারে। কিন্তু, সরকার বিরোধী হাওয়া মোটেই দুর্বল নয়। যে দেশের ৬০ কোটি মানুষ দিনে ১০০ টাকাও রোজগার করেন না, সেখানে সরকার বিরোধী জনমত কখনও লঘু হতে পারে না। এই ভুল যেন কেউ না করেন।’
কিশোরের দাবি, ভারতে কেউ ৫০ শতাংশ ভোট পায়নি। সহজভাবে বলা যায়, ভোট দেওয়া ১০০ জনের মধ্যে ৪০ জন মোদীকে সমর্থন করেন। তাঁর আদর্শ, কাজ, হিন্দুত্ব, রামমন্দির, ৩৭০ ধারা বিলোপের সমর্থক তাঁরা। ফলে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৪০ জন মানুষ খুশি মোদীতে। কিন্তু, পরে থাকা ৬০ জন কিন্তু অসুখী। এটা যেন মাথায় থাকে!
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বিজেপির সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ হল গ্রামীণ এলাকার মানুষের মধ্যে গভীর অসন্তোষ। তাঁরাই ভোটারদের বিরাট অংশ যাঁরা বঞ্চিত। তার পরেও যদি বিজেপি জিতে যায়, তাহলে বুঝতে হবে বিরোধী দলগুলি শক্তিহীন কিংবা মানুষের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ। বিজেপি জিতলেও মনে করার কোনও কারণ নেই যে, দেশের প্রতিটি মানুষ মোদী সরকারের উপর খুশি, বলেন কিশোর।
ভোট বিশেষজ্ঞ প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে মোদীর যে ভাবমূর্তি বা ব্র্যান্ড অক্ষত ছিল, ২০২৪ সালে তার অনেকটাই ক্ষয়ে গিয়েছে। এ বছর তাঁকে ছাড়া ভোট দেওয়ার আর কে আছে…কিন্তু ব্যান্ড মোদীর ক্ষমতা কমে এসেছে। প্রশান্ত যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ২০১৪ সালে বিজেপি কর্মীদের ভিতরে একটা জোশ কাজ করেছিল। ২০১৯ সালে দেশের মানুষ ভেবেছিল এদের আরও পাঁচটা বছর কাজ করার সুযোগ দেওয়া যায়। অনেকেই ২০১৪ সালে ভেবেছিলেন মোদী ক্ষমতায় এলে দেশে পরিবর্তন আসবে। কিশোরের ভাষায়, এবছর মানুষ ভাবছে, অব কেয়া করে, কোই দুসরা হ্যায় নেহি তো ইনহি কো দেনা পড়েগা। ফলে মানুষের মনেই নেতিবাচক পরিবর্তন এসে গিয়েছে। মানুষের মধ্যেও সেই উৎসাহ আর নেই, তা বোঝা যাচ্ছে কম ভোটদানের হারে।
ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর ওই সাক্ষাৎকারে বিজেপি এবং মোদীর এবার ৪০০ পার স্লোগানের বিষয়ে বলেন, সেটা সম্ভবত হবে না। পিকের কথায়, ‘উত্তর ও পশ্চিম ভারতে সেভাবে বিজেপির পতনের কোনও কারণ দেখতে পাচ্ছি না। বরং দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে বিজেপির ভোট শেয়ার এবং প্রাপ্ত আসন বাড়বে। জয়ী সব আসন যোগ করলে বিজেপি মোট ৩০০ আসন পাবে। ইতিবাচক বা নেতিবাচক দুই দিক থেকেই খুব বড় কোনও পরিবর্তনের আভাস-ইঙ্গিত চোখে পড়ছে না।