এশিয়ার বৃহত্তম এই বস্তির পুনর্নির্মাণ এবং পুনর্বাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। এই প্রকল্পের জন্য আগ্রহী বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করেছিল তারা। সব চেয়ে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করার কথা জানিয়ে অন্য সংস্থাগুলিকে পিছনে ফেলে দেয় শিল্পপতি গৌতম আদানির আদানি গোষ্ঠী।
প্রাথমিকভাবে এক্ষেত্রে ৫,০৬৯ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। ধারাভি রি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের সিইও তথা কমিশনার অফ মহারাষ্ট্র হাউজিং অ্যান্ড এরিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এসভিআর শ্রীনিবাস জানিয়েছেন আদানি গ্রুপ টেন্ডার জিতেছে। ডিএলএফ গ্রুপ ২,০২৫ কোটির বিড জমা দিয়েছিলেন। নমন গ্রুপের বিড আমরা খুলিনি। কারণ টেকনিকাল পরীক্ষায় তারা পাস করতে পারেনি। চুক্তি মোতাবেক উল্লেখ করা হয়েছিল যারা সবথেকে বেশি খরচ করতে পারবে বলে জানাবে তারাই এখানে নিলাম জিতবে। এক্ষেত্রে সংস্থাকে ১৬০০ কোটির বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। সেই নিলামে জিতে গিয়েছে আদানি গ্রুপ।
গত ১৮ বছরে এনিয়ে চতুর্থবার মহারাষ্ট্র সরকার এশিয়ার বৃহত্তম এই বস্তিকে উন্নয়ন করার কাজে হাত দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রায় ৫৮,০০০ পরিবার এই বস্তিতে বাস করেন। ১২,০০০ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এই বস্তির মধ্যে রয়েছে। এই বস্তির মধ্য়ে থাকা আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্পগত ক্ষেত্রে সব জায়গাতেই পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।
আরও পড়ুন: Vande Bharat Express: রং দে তু মোহে গেরুয়া! রাতারাতি বন্দে ভারতের রঙ বদল
মহারাষ্ট্র প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রায় ৬০০ একর এলাকার উপর দাঁড়িয়ে থাকা এই বস্তিতে আধুনিক সুযোগসুবিধা সম্পন্ন বাড়ি, শপিং মল তৈরি করা হবে। বর্তমানে বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য হওয়া বাসিন্দাদের ‘যোগ্যতার ভিত্তি’তে পুনর্বাসন দেওয়া হবে নতুন তৈরি হওয়া আবাসনে। আগামী সাত বছরের মধ্যে ধারাভির বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দিতে হবে এবং তার পরের ১০ বছরের মধ্যে সমস্ত বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করতে হবে। আদানি রিয়েলটির একজন মুখপাত্র বলেছেন, আর্থিক ক্ষতি সত্ত্বেও তাদের সংস্থা এই প্রকল্পের উন্নয়নে দারুণ আগ্রহী। কিন্তু, কেন ধারাভি বস্তির পুনর্নির্মাণে উৎসাহী আদানি গোষ্ঠী?
রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১৭ বছর পর এই প্রকল্প থেকে আদানি গোষ্ঠী যে লাভ করবে, তার সামনে লগ্নির এই অর্থের পরিমাণ অত্যন্ত কম। প্রকল্পটির নির্মাণ শেষ হলে ধারাভি থেকে ৬ লক্ষ কোটি টাকা উপার্জন করবে আদানি রিয়েলটি, এমনটাই আশা করা হচ্ছে। এই বস্তি একেবারে মুম্বই শহরের কেন্দ্রস্থলে, সায়ন এবং মাহিম মেট্রোস্টেশনের মধ্যে অবস্থিত। মুম্বইয়ের সবথেকে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র, বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্স এই বস্তি থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আদানি গোষ্ঠীর পরিচালিত ছত্রপতি শিবাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও এখান থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে। কাজেই ধারাভি বস্তির উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার ফলে, আদানি গোষ্ঠী মুম্বইয়ের সবথেকে বড় বাণিজ্যিক জমির মালিকে পরিণত হবে।
উল্লেখ্য যে, মহারাষ্ট্রের রাজ্য রাজনীতিতে সম্প্রতি আরও একটি বদল ঘটেছে। কাকা শরদ পওয়ারের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে দলের সিংহভাগ বিধায়কদের নিয়ে মহারাষ্ট্রের বিজেপি-শিবসেনা সরকারে যোগ দিয়েছেন এনসিপির অজিত পওয়ার। শুক্রবারেই তিনি মহারাষ্ট্রর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। তার পরেই বস্তি পুনর্নির্মাণে আদানির বরাত পাওয়ার ঘোষণাকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন কেউ কেউ।