Mahua Moitra: BJP paid heavy price for throttling voice of one MP: Mahua Moitra

Mahua Moitra: দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা হয়েছিল, মোদীকে বিঁধে লোকসভায় ঝাঁজালো কামব্যাক মহুয়ার

দ্বিতীয়বার সাংসদ হিসেবে লোকসভায় প্রথম ভাষণ থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে তৃণমূল কংগ্রেসের কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সপ্তদশ লোকসভা থেকে যেদিন তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল সেদিনই ঘোষণা করেছিলেন তিনি বিজেপির শেষ দেখে ছাড়বেন। সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ গ্রহণ করে সেই বিষয়টিকে তুলে ধরে বিজেপিকে তুলোধোনা করেছেন মহুয়া।

মহুয়া তাঁর বক্তৃতায় আগাগোড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করেছেন। যদিও সেই সময় মোদী লোকসভায় ছিলেন না। বস্তুত, মহুয়া যখন বলতে উঠছেন, তখনই মোদী নিজের আসন ছেড়ে উঠে পড়েন সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। সেটি লক্ষ্য করে মহুয়া সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আমার কথা শুনে যান। ভয় পাবেন না। আমার কেন্দ্রে দু’বার এসেছেন। এ বার আমার কথা শুনে যান।’’ মোদী অবশ্য তাতে কর্ণপাত করেননি। তাতে কটাক্ষ ছুঁড়ে কৃষ্ণনগরের সাংসদ বলেন, “আমার দুর্ভাগ্য। যার ইচ্ছে চলে যাক। আমাকে দমানো যাবে না, অগ্নিপরীক্ষা পার করে এখানে এসেছি।”

তাঁর কথায়, “বিজেপির ঔদ্ধত্যর জবাব গণদেবতা দিয়েছে, বিজেপির রাজতন্ত্রকে ৩০৩ থেকে গণতন্ত্রই ২৪০ এ নামিয়ে এনেছে।” মহুয়ার ভাষণের শেষে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী নিজের আসন ছেড়ে উঠে এসে করমর্দন করেন যান। অন্যান্য বিরোধী দলের সাংসদরা মহুয়ার কাছে এসে তাঁর ভাষণের প্রশংসা করেন। কৃষ্ণনগরের সাংসদ ভোটে বিজেপির বিপর্যয়কে উপহাসের সুরে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের কণ্ঠরোধ করার মূল্য চোকাতে হয়েছে শাসকদলকে।

মহুয়ার বক্তব্যের সময় ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে বিপুল হট্টগোল শুরু হয়। সেই সময় তৃণমূলের সতীর্থরা তাঁদের চুপ করতে বলেন। মহুয়া বলেন, ‘যার ইচ্ছে হয় চলে যান। আমি আমার ভাষণ শেষ করে যাব। কারণ আমাকে এখানে বসতে দেওয়ার জন্য ভোটাররা শাসকদলের ৬৩ জনকে ছাঁটাই করে দিয়েছেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একা জিতেছিল ৩০৩টি আসনে। এ বার তারা জয়ী হয়েছে ২৪০টি আসনে।’ সেই প্রসঙ্গেই খোঁচা দিলেন তিনি। মহুয়া এও মনে করিয়ে দিলেন যে, একার বলে ৫৪৩ আসনবিশিষ্ট লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘আমায় বসাবেন না, আরও ভারী পড়বে।’’

গত ৮ ডিসেম্বর সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল মহুয়াকে। সে দিন তিনি বেরিয়ে বলেছিলেন, ‘শেষ’ দেখে ছাড়বেন! সেই ‘শেষ’ তিনি দেখে নিয়েছেন, সোমবার লোকসভার অধিবেশন স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন। রাষ্ট্রপতির প্রারম্ভিক ভাষণ নিয়ে আলোচনায় আগের থেকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন মোদী সরকারকে। তিনি সংসদ থেকে নিজের বহিষ্কার হওয়ার দিনের সঙ্গে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের তুলনা করলেন। তাঁর কথায়, ‘‘৮ ডিসেম্বর কুরুসভা হয়েছিল সংসদে। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা করেছিলেন দুঃশাসন। ধৃতরাষ্ট্র সে দিন অন্ধ ছিলেন।’’

এর পরেই মহুয়া পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানালেন, যাঁরা সে দিন তাঁর ‘বস্ত্রহরণ’-এ শামিল হয়েছিলেন, সেই এথিক্স কমিটির সদস্যদের লোকসভা ভোটে কী ফল হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এথিক্স কমিটি আমার বহিষ্কারে অনুমোদন দিয়েছিল। সেখানে ১০ জন সদস্য ছিলেন এবং এক জন চেয়ারপার্সন। পাঁচ জন সদস্য ছিলেন বিজেপির। তাঁদের মধ্যে চার জনই হেরে গিয়েছেন। চেয়ারপার্সনও হেরেছেন। কংগ্রেসের যে সাংসদ তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন, তিনিও হেরেছেন। মহারাষ্ট্রের যে সাংসদ বিজেপির হয়ে বিতর্ক তুলেছিলেন, তিনিও হেরেছেন। কৃষ্ণের মতো কৃষ্ণনগরবাসী আমায় রক্ষা করলেন।’’

মহুয়া জানিয়েছেন, মোদীর তাঁর উপর বিশেষ ‘কৃপা’ ছিল। সে কারণে তাঁর লোকসভা আসন কৃষ্ণনগরে দু’বার জনসভা করতে এসেছিলেন। তাতেও লাভ হয়নি। এর পর সংসদে মহুয়া পরিসংখ্যান তুলে ধরে এই দাবিও করেন যে, যেখানে যেখানে প্রধানমন্ত্রী জনসভা করেছেন, তার বেশির ভাগ জায়গাতেই হেরেছে বিজেপি। এমনকি রামও ভোট বৈতরণী পার করাতে পারেনি বিজেপির, এই বলে কটাক্ষ করলেন মহুয়া। মনে করিয়ে দিলেন ফৈজাবাদ আসনে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থীর কাছে বিজেপির হারের কথা। অযোধ্যা ফৈজাবাদ লোকসভা আসনের অধীনে পড়ে। তাঁর খোঁচা, ‘‘রাম বলল, থাক, আমার নামে আর নয়। অতি দর্পে হত লঙ্কা।’’ আর এই দর্পের জন্য ‘গণদেবতা’ শাস্তি দিয়েছে মোদীকে, দাবি করলেন মহুয়া।

তাঁর দাবি, বাংলায় প্রধানমন্ত্রী যেখানে ২৩টা জনসভা করেছিল তার মধ্যে বিজেপি ২০টা হেরেছে। মহারাষ্ট্রে ১৮টি জনসভার জায়গাতে ১৫টিতে হার। একের পর এক পরিসংখ্যান দিয়ে মোদী-র জনসভায় জায়গাতেই যে বিজেপি হেরে গিয়েছে সেই বিষয়টি তুলে ধরে, ”এক আকেলা সব পর ভারি পরা’ বলে বার বার স্লোগান দেন মহুয়া।

সোমবার সংসদে আলোচনায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণের ছ’টি বিষয় তুলে ধরেও মোদী সরকারকে কটাক্ষ করেছেন মহুয়া। মণিপুর নিয়ে কেন্দ্রের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ থেকে বিজেপির মহিলা সাংসদের সংখ্যা হ্রাস, সব নিয়েই সরব হয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ভোটের প্রচার খোদ প্রধানমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের অবমাননা করে মন্তব্য করলেও ‘মূক, বধির’ হয়ে ছিল কমিশন। ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে বিমানবন্দরের ‘বেহাল’ দশাও ফিরে এসেছে তাঁর ভাষণে। কাশ্মীরের তিন আসনে বিজেপি কেন প্রার্থী দিতে পারল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ভারতবাসী ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করবে এই সরকারের পতনের জন্য।’’